ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

গ্যাস সংকটে কমছে উৎপাদন

গ্যাস সংকটে কমছে উৎপাদন

কারখানাগুলোর যন্ত্রপাতি সচল রাখতে কমপক্ষে ১৫ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন সমকাল

সফুরউদ্দিন প্রভাত, আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ২২:৫১

আড়াইহাজারে তীব্র গ্যাস সংকটের কবলে পড়েছে শিল্পকারখানা। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বন্ধের পথে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কারখানার মালিকরা। 
উপজেলায় দেড় শতাধিক বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই পোশাকশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কারখানায় কাজ করছে কয়েক লাখ শ্রমিক। তিন মাস ধরে গ্যাস সংকট থাকায় বিপদে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ থেকে রক্ষা পেতে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ও ডিজেলচালিত জেনারেটর চালাচ্ছে তারা। এতে খরচ বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, কমেছে উৎপাদন সক্ষমতা। এ পরিস্থিতিতে কারখানা সচল রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকরা।

আড়াইহাজারে পোশাক কারখানার পাশাপাশি রয়েছে স্পিনিং, অ্যালুমিনিয়াম, সাইজিং, ডাইং কারখানাও। এসব কারখানার যন্ত্রপাতি সচল রাখতে কমপক্ষে ১৫ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।  দিনের বেলায় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ পিএসআই, রাতের বেলায় দেড় থেকে ২ পিএসআই।
এ অবস্থায় অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। কমেছে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতাও। ফলে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে উদ্যোক্তারা।
মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তারা সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। কারখানা বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূর করার আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিটিএমএ।
হাজী আক্তার টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রসেসিং মিলস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘চার মাস ধরে গ্যাসই পাই না। ঈদ ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে অধিক ব্যয়ে অন্যান্য জ্বালানি দিয়ে ২০ শতাংশ মেশিন চালু রাখা হয়েছে। এর সমাধান না হলে কারখানাটি বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

বিকল্প উপায়ে বাড়ছে ব্যয়
গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে লিড প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পাওয়া মিথিলা টেক্সটাইলের ওভেন ডাইং কারখানায় তুষচালিত বয়লার ব্যবহার শুরু করে। এ কারখানা কর্তৃপক্ষের মতে, গ্যাসের বদলে তুষ দিয়ে বয়লার চালানোর ব্যয় তিনগুণ বেশি। বয়লারে এক টন বাষ্প তৈরি করতে এখন ৭১৪ টাকার গ্যাস খরচ হয়; যা ধানের তুষ দিয়ে করতে লাগে ২ হাজার ১৯২ টাকা।
মিথিলা গ্রুপের পরিচালক মাহবুব খান হিমেল বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে বিদেশি বায়ারদের চালান দিতে গিয়ে বর্তমানে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে এবং মুনাফার বদলে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (আয়-ব্যয় যখন সমান্তরাল) নেমে এসেছি। তা সত্ত্বেও আমরা মানসম্পন্ন ফ্যাব্রিক্স সাপ্লাই দিয়ে তাদের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে গ্যাসের চাপ তলানিতে নেমে আসায় কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। শুধু গ্যাসের অভাবে অনেক বায়ারের অর্ডার নিতে পারছি না।’ দ্রুত গ্যাসের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে গ্যাস দাবি
ছয় ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিথিলা গ্রুপ, এন জেড গ্রুপ, ফকির গ্রুপ, নান্নু গ্রুপ, সিমটেট গ্রুপ, এশিয়াটিক গ্রুপ, ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিলসসহ রপ্তানিমুখী শতাধিক শীর্ষ শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করায় প্রায়ই গ্যাসের চাপ কমে যায়। এতে জেনারেটর ও বয়লার চালানো সম্ভব হয় না। তাই চাহিদামতো গ্যাস পেতে এসব শিল্পকারখানার মালিক আড়াইহাজারে প্রতিষ্ঠিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডিআরএস অপটেক ভাল্ব থেকে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে বিটিএমএর ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা সংকটে পড়ায় শিল্প খাতের উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে শিল্পমালিকদের হিমশিম অবস্থা। কিছু প্রতিষ্ঠান সিএনজি এবং ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখার চেষ্টা করায় বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ সংকট নিরসনে শিগগির সরকারের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের আড়াইহাজার শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রায়হান কবির জানান, সারাদেশেই গ্যাসের সরবরাহ কম। গ্যাস সরবরাহস্থল থেকে এ উপজেলা সর্বশেষ প্রান্তে। ফলে অন্য কারখানাগুলো গ্যাস নেওয়ার পরে এ এলাকায় এসে গ্যাসের চাপ তেমন থাকে না। সরকার এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উত্তরণে কাজ করছে। এ সংকটের সমাধান শিগগির হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) এস এম জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×