২৬ মাসের বেতন বকেয়া কর্মবিরতিতে সেবায় বিঘ্ন

আন্দোলনে কর্মকর্তা কর্মচারীরা, সেবা বন্ধে ভোগান্তি মানুষের
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ২৩:০২
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মেহেরপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার পৌরসভা চত্বরে এসে ঈদের আগেও বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বকেয়া বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে তারা জানিয়েছেন। ঈদের আগে পৌরসভার সেবা এভাবে বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
পৌরসভার কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় ২৬ মাসের বেতন বকেয়া থাকলেও দেওয়ার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা ভালোভাবে ঈদ পালন করবে, সে সুযোগও নেই। দোকানের বকেয়া, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাসহ পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত বেতন না দিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নাগরিক সেবা বন্ধ করে আন্দোলনের বিষয়ে তারা বলছেন, পেটে ভাত না থাকলে কীভাবে সেবা দেবে। বেতনের জন্য চাকরি করা। তাদের আন্দোলনে জরুরি সেবা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুলশিক্ষক মাহফুজা খানম ওয়ারিশ সনদ নিতে গিয়েছিলেন। কর্মচারীরা আন্দোলনে নামায় আবেদন জমা দিতে পারেননি। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে তারা সমস্যার সমাধান করতে পারেন। নাগরিক সেবা না দেওয়া অন্যায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কায়েম উদ্দিনের ভাষ্য, তিনি নাগরিক সনদ নিতে তিন দিন ধরে ঘুরছেন। তারা বলেন, প্রশাসক নেই, স্বাক্ষর হয়নি। সমস্যা দেখিয়ে ফিরিয়ে দেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশ্ববপাড়ার মাহাবুবুর রহমান বলেন, তাদের পাড়ার স্ট্রিট লাইট বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটুপানি জমে। ২০ বছর আগে কার্পেটিং করা রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে রাবিশ (ইটের খোয়া) এনে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। এলাকা ময়লা-আর্বজনায় ভরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কর্মীকে দেখা যায় না। ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ সিরাজ উদ্দিনের।
পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন দিপু বলেন, নাগরিক সেবা দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সামনে ঈদ, তাই কেউ এ আহ্বান মানতে রাজি হচ্ছেন না। অন্তত এক মাসের বেতন দিলে সবাই কাজে ফিরবেন।
হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পৌরসভায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। মাসিক আয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক বেতন ৫২ লাখ টাকা। মাসে ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বেতন দিতে ব্যয় হয়। কর্মচারীদের বেতন-গ্র্যাচুইটিসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
পৌরসভার হিসাবরক্ষক মোহাদ্দেস হোসেন বলেন, পাওনা সব টাকা আদায় হলেও তা খুব সামান্য। কারণ শুধু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় কোটি টাকার ওপরে। বেতন-ভাতা, গ্র্যাচুইটি ও অবসর ভাতার ২০ কোটিসহ অন্যান্য বিল ৪-৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ মাসে রাজস্ব খাতে টেন্ডার হয়নি।
পৌরসভার প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি জেনারেল) তারিকুল ইসলাম বলেন, ফান্ডে টাকা না থাকায় কর্মচারীদের বেতন হয়নি। যে টাকা ছিল, তা উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছে। বকেয়া আদায় হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের বেতন দেওয়া হবে। কর্মচারীদের টাকা ওঠানোসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
- বিষয় :
- সেবামুলক উদ্যোগ