ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

‘অভিনেতা সমু চৌধুরী মানসিক ভারসাম্যহীন নন, মাজারভক্ত হিসেবে এসেছেন’

‘অভিনেতা সমু চৌধুরী মানসিক ভারসাম্যহীন নন, মাজারভক্ত হিসেবে এসেছেন’

সমু চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫ | ০০:৪৮

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার মশাখালি ইউনিয়নের শাহ মিসকিন জয়নাল আবেদীনের মাজার থেকে অভিনেতা সমু চৌধুরীকে ‘অস্বাভাবিক’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে তিনি ‘মানসিক ভারসামহীন’ নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানান তারা। একজন মাজারভক্ত হিসেবে তিনি এর আগেও একাধিকবার এই মাজারে এসেছেন বলে জানা যায়।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন গফরগাঁও উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। 

তিনি জানান, সমু চৌধুরী দেশের একজন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী। হঠাৎ করে মশাখালি ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন মাজারে তাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখতে পায় স্থানীয় জনতা। পরে গণমাধ্যমের সংবাদে বিষয়টি ভাইরাল হলে আমাদের নজরে আসে। উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে আমিসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।

আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সমু চৌধুরীর সাথে আমরা দীর্ঘ এক ঘণ্টা কথা বলি। এ সময় তাকে বেশ সুস্থ সাবলীল মনে হয়েছে। তিনি অতীতের মনে করতে পারছেন। তাকে দেখে মোটেও পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি। আমাদের সামনে তিনি তার পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছেন। 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন মাজার ভক্ত মানুষ। তিনি নিজেই আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন এর আগেও অনেকবার তিনি এই মাজারে এসেছেন। এই এলাকার রাস্তাঘাটও তিনি ভালো করে চেনেন। তার বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি পরিবারসহ ঢাকায় থাকেন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী এলাকা থেকে তিনি এই মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানের মাজার ভ্রমণ করেন।

মাজারে থেকে এই অভিনেতা প্রশান্তি পান। মূলত ধ্যান করার জন্যই তিনি এই মাজারে মাঝে মাঝে আসেন। তার পরিবারের লোকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন। এখন তিনি মাজারেই অবস্থান করছেন। পরিবার ঢাকা থেকে এলে তাদের সাথে তিনি চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। 

ডাক্তার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তিনি তার জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তাদের সামনে কবিতা আবৃত্তিসহ তার বিভিন্ন অভিনয়শিল্পও দেখিয়েছেন এ অভিনেতা। তিনি তার পরিবারের সকলের সাথে আমাদের সামনে ফোনে কথা বলেছেন। যেহেতু পরিবারের সবাইকে তিনি চিনতে পারছেন সেহেতু তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন নন।

এর আগে শাহ্ মিসকিনের মাজারের পাশে গাবগাছের নিচে গামছা পরে সমু চৌধুরীর শুয়ে থাকার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে প্রথমে খালি গায়ে গামছা পরা অবস্থায় সমু চৌধুরীকে দেখা যায়। পরে অবশ্য ট্রাউজার ও গেঞ্জি পরা অবস্থায় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সামনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মাজারে এসেছি। খুবই সুন্দর জায়গা। মানুষগুলো খুব ভালো। এখানে এত সহজ-সরল মানুষের দেখা পাওয়া যায়।’

সমু চৌধুরীকে চিনতে না পেরে স্থানীয় যুবক মামুন মিয়া প্রথমে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে। এই ছবি দেখেই অভিনেতা সমু চৌধুরীকে চিনতে পারেন সমু ভক্তরা।

মামুন সমকালকে বলেন, বুধবার রাত নয়টার দিকে ঢাকা থেকে একজন পাঠাও মোটরসাইকেল রাইডারের মাধ্যমে তিনি গফরগাঁও আসেন। এই পাঠাও রাইডার অভিনেতার পূর্ব পরিচিত। রাইডার মাজারের রাস্তা চিনতে ভুল করায় পৌঁছার পর তাকে কিছু গালমন্দ করেন এই অভিনেতা। পরে আমরা এগিয়ে এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেই। 

পাঠাও রাইডার চলে যাওয়ার পর আমরা তার পরিচয় ভালোভাবে জানতে পারিনি। পরে সকালে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করায় একটি ভাইরাল হয়। তার সাথে কথাবার্তা বলে মনে হয়েছে তিনি পাগল নন। তবে একজন মাজার ভক্ত হিসেবে তিনি মাজারে মাজারে গিয়ে ধ্যান করেন। বুধবার রাতে এই মাজারে আসার পর হয়তো তিনি কিছুটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। 

মামুন আরও জানান, দুপুরের দিকে সমু চৌধুরীর মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলে তিনি আমার কাছে তার মোবাইলটি চার্জ দেওয়ার জন্য দেন। এ সময় তার পরিবারের একজন সদস্য মোবাইলে কল দিয়ে সমু চৌধুরীর অবস্থান জানতে চান। সর্বশেষ অবস্থা শুনে পরিবার চৌধুরীকে নিয়ে তাকে ঢাকায় যেতে বলেন। ততক্ষণে বিষয়টি গণমাধ্যম এবং পুলিশ প্রশাসনের নজরে চলে আসায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। 

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলমের মতে, অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন সুস্থ-সবল মানুষ। মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। বুধবার রাতে এই মাজারে এসে তিনি ধ্যানে লিপ্ত ছিলেন। যেহেতু এক কাপড়ে তিনি ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন সকালবেলা গোসল করার পর তার কোনো কাপড় ছিল না। ফলে গামছা পড়ে তিনি একটি গাছের নিচে শুয়ে ছিলেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে তাকে নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়। 

তিনি আরও জানান, তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। প্রশাসন এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে আমরা তাকে ভালো পরিবেশে থাকার অফার করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন তিনি আপাতত মাজার এই অবস্থান করবেন। পরিবারের সদস্যরা এলে পরে তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন।

আরও পড়ুন

×