পুলিশের ধাওয়ায় মৃত্যু, ১০ মাস পর হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক গ্রেপ্তার
মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

অধ্যাপক মাহামুদুল হক
রংপুর অফিস
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ | ২২:৫৪
পুলিশের ধাওয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ১০ মাস পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে। তার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রংপুরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ৩ জুন হাজিরহাট থানায় মামলাটি করেন ছমেছের স্ত্রী আমেনা বেগম। স্বামীকে নজিরের হাটে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ আনেন।
এজাহারে বলা হয়, রংপুরের পুলিশ, প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় ছমেছকে কুপিয়ে জখম করে। রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা ছিল।
হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে ছমেছের বাড়ি গেলে স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, তার স্বামীকে ধরতে ২ আগস্ট পুলিশ এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কেন হত্যা মামলা করলেন? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে কাগজে সই করতে বলেছে। তিনি সই করেছেন। তিনি কারো নামে মামলা করেননি।
ছমেছের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, তার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে দোকান থেকে নেমে পালাতে গিয়ে মারা গেছেন। যারা বাবাকে ধরতে এসেছিল, তিনি তাদের বিচার চান। তিনি স্বীকার করেন, তার বাবা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
মূলত গত ২ আগস্ট স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির নাছির উদ্দিনকে ধরতে পুলিশ গিয়েছিল। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা অন্যায়। নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় তারা বলেন, ভুয়া মামলায় শিক্ষক মাহমুদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাহমুদুলের মুক্তিসহ তিনদফা দাবি জানান তারা। এগুলো হল বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হককে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আগামী ৩ কার্য দিবস সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে থানা ঘেরাও করা হবে বলে হুশিয়ার করেন তারা।