পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি-সমকাল
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৬:৫২ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮:৫৩
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পটিয়া থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়কের পটিয়া সদরের কাগজীপাড়া এলাকায় সড়কে অস্থান নেয়। এসময় মহাসড়কের উভয় প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে দূরপাল্লার যাত্রীরা। আটকে পড়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে দুই দফা সংঘর্ষ হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল সাড়ে নয়টায় পটিয়া থানা ঘেরাও করেন তাঁরা। সেখান থেকে সড়ক অবরোধ শুরু হয়। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওই এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে এই অবরোধ হচ্ছে। পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তাঁদের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর ও উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অবরোধের কারণে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল কাজীরপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক অনেকটাই অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে এ সময় দেখা যায়নি।
অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, যান চলাচল করতে না পারায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কথা হয় জাকির হোসেন নামের এক বাসচালকের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তিনি আটকে রয়েছেন। তাঁর বাসে ৩৫ থেকে ৪০ জন যাত্রী রয়েছে। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম পৌঁছানো নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পটিয়া কাগজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী সমকালকে বলেন, চিকিৎসার জন্য তিনি চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন। বেলা দুইটার দিকে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তাঁর। তবে অবরোধের কারণে তা অনিশ্চিত। বাধ্য হয়েই তিনি হেঁটে রওনা হয়েছেন। সামনে থেকে কোনো গাড়ি পেলে তাতে উঠবেন।
আবদুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থী তাসনিয়া জাহান জানান, প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেটে আমজুরহাটে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। কোন ধরনের গাড়ি না থাকায় হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে পটিয়া সার্কেলের এএসপি আরিফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করারা চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১১টায় পটিয়া থানার পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করে উভয় পক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাঁকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এ বিষয়ে জানতে আজ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করা হয়। তবে তাঁরা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।