যুক্তরাষ্ট্রের দম্পতির উদ্যোগ
মায়ের স্নেহে অনাথদের গড়ে তুলছে 'বাংলাহোপ'

জয়পুরহাটের পাঁচবিবির হাজরাপুরে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় খেলা করছে অনাথ শিশুরা- সমকাল
শাহারুল আলম, জয়পুরহাট
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ১৫:৪৮
জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে দিনাজপুর-হিলি সড়ক হয়ে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচবিবি উপজেলা সদরের সীমান্তবর্তী হাজরাপুর গ্রাম। একেবারেই নিভৃত পল্লি এলাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো নয়। এমন একটি গ্রামে ২০০৪ সালে বেড়াতে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দম্পতি ডেভিড এল ওয়েড ও বেভারলি জে ওয়েড। সে সময় তারা ওই এলাকার অনাথ শিশুদের কথা ভেবে প্রায় ১৪ একর জমিতে গড়ে তোলেন বাংলাহোপ নামে একটি এতিমখানা। আজও সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে এটি। এখানে প্রতিটি শিশুকে একেবারে মায়ের স্নেহে আদর-যত্ন দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন নিয়োজিত 'মা কর্মীরা'।
আশপাশের লোকজন ও এতিমখানায় নিয়োজিত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনাথ শিশুদের লালন-পালনের পাশাপাশি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। ১৪ একর জমির মধ্যে আছে চিলড্রেন হোমসহ বিভিন্ন ভবন। এ ছাড়া খেলাধুলার মাঠও আছে বেশ বড়। এই শিশুদের প্রতিদিন আলোর পথ দেখাচ্ছেন নিয়োজিত কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিশুই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের।
সংশ্নিষ্টরা আরও জানান, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে এতিম শিশু আছে ১৬১টি। তারা সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের পরিচর্যা, দেখভাল, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য মোট ৭১ জন কর্মী আছেন। তাদের মধ্যে মায়ের দায়িত্ব পালন করছেন ১৬ নারী। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে মায়ের স্নেহে বেড়ে উঠছে এতিম শিশুরা। তারা নিয়োজিত নারীদের মা বলেই জানে, মা বলেই ডাকে।
এতিমখানায় মায়ের দায়িত্ব পালন করা শান্তি কিসকু, বন্দনা, অর্চনাসহ অনেকেই সমকালকে বলেছেন, এখানকার ছোট ছোট শিশুদের তারা অতি আদরে দেখাশোনা করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের দম্পতি এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই আজ এতিম শিশুরা ভালোভাবে খাওয়া-পরার পাশাপাশি সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়াও করছে। এ ছাড়া বাংলাহোপের আছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। এতে যে কেউ প্রবেশ করলে একনজরে দেখতে পাবে অনাথ শিশুদের জীবনবৃত্তান্ত, মেধা, অসহায়ত্বের চিত্রসহ তাদের সেবাগুলো। শিশুদের দিন দিন উন্নতির কথাও উল্লেখ আছে। কোন অবস্থায় তারা এখানে এসেছিল, বর্তমানে তাদের অবস্থা কী, তাও জানা যাবে। এসব দেখেই বিদেশি ওই দম্পতি ও তাদের বন্ধুবান্ধবরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আগের চেয়ে বেশি।
এতিমখানার পরিচালক পনুয়েল বাড়ৈই বলেন, বিদেশিদের আর্থিক সহযোগিতায় আজ এই এতিমখানা সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে শিশুদের ভালো-মন্দসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদেশিদের অবহিত করে আসছেন তিনি। বিদেশিরা সবকিছু জেনেই আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বিদেশিদের নজর ঠিকই আছে, তবে দেশের মানুষের কোনো নজর নেই বললেই চলে। কেননা পাঁচবিবি থেকে এই প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। অর্ধেকের বেশি কাঁচা রাস্তা রয়েছে আজও। বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তায় চলাচল করতে খুবই কষ্ট পোহাতে হয়। এই প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে যেন দ্রুত এই রাস্তার বাকি অংশ পাকা করা হয় সেই অনুরোধ জানাই।
এতিমখানার নির্বাহী পরিচালক সুচিত্রা সরেন বলেন, এতিম শিশুদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এখানে ১৬১টি শিশুর সার্বিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও বরিশাল, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুরসহ ছয় জেলার ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা প্রায় ৪৮৪ এতিম শিশুর দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের দম্পতিরা। তাদের খাবার, বাসস্থান, পোশাকসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তিনি আরও বলেন, অসহায় শিশুরা দেশের বোঝা না হয়ে বাংলাহোপের দেখানো পথ অনুসরণ করে যেন সমাজের উপকারে আসে, সে লক্ষ্যেই এই এতিমখানা পরিচালিত হয়ে আসছে। পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল শহিদ মুন্না বলেন, নিভৃত পল্লি এলাকায় অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। রাস্তা পাকা করার বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা হবে।
- বিষয় :
- যুক্তরাষ্ট্র
- দম্পতি
- দম্পতির উদ্যোগ
- বাংলাহোপ
- জয়পুরহাট