নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে গবেষকরা

ফাইল ছবি
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | ২১:০৮ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | ২১:১০
খুলনা অঞ্চলে আমন মৌসুমে স্থানীয় জাতের তিনটি ধানের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি ধানের জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন গবেষক নতুন এই জাত নিয়ে কাজ করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার এই গবেষণা প্লটের ধানের নমুনা ফসল কাটা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। এ সময় উপস্থিত থাকবেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রায়হান আলী, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক আশীষ কুমার দাশ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক হাফিজুর রহমান।
গবেষকরা জানান, নতুন এই ধানের সারিটি কেইউএটি-১৭০১ নামে মূল্যায়িত হচ্ছে। বর্তমানে এ সারির ভৌতিক, রাসায়নিক ও মলিকুলার বিশ্নেষণের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী বছর বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলার বিভিন্ন জায়গায় মাঠপর্যায়ে সারিটি মূল্যায়ন করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে চূড়ান্তভাবে জাত নির্বাচনের জন্য আবেদন করা হবে।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় জাতগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরেই এগুলোর চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, স্থানীয় ধানের এ জাতগুলো হচ্ছে মূল্যবান জিনের ভান্ডার, যা অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্লান্ট ব্রিডিং এবং বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরিতে খুলনা অঞ্চলের তিনটি জাতের ধান (রানী স্যালুট, কাচড়া ও চিনি আতপ) টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে দেহকোষে মিউটেশন (সোমাক্লোন) ঘটিয়ে উন্নত জাত তৈরির লক্ষ্যে এই গবেষণা শুরু হয়। গবেষণায় বেশকিছু টিস্যু কালচার গাছের ভেতর থেকে রানী স্যালুট জাতের একটি গাছকে নির্বাচন করা হয়, যা মাতৃগাছের চেয়ে অন্তত এক মাস আগে ফলন দেয় এবং এর বীজ মাতৃগাছের বীজের থেকে আকারে অনেক ছোট। নেট হাউসে প্রাথমিক গবেষণায় এ ধানের ফলন মাতৃগাছের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়।
অধ্যাপক মনিরুল জানান, ২০১৯ সালেও বিগত বছরের মতো ফলন পাওয়া যায়। ওই বছর গড় ফলন পাওয়া যায় প্রতি হেক্টরে তিন টন। সোমাক্লোনের এক হাজার বীজের ওজন ২০ গ্রাম, যেখানে মাতৃগাছের বীজের ওজন ৩১ গ্রাম। একইভাবে চলতি আমন মৌসুমের ২৯ জুলাই এই ধানের বীজ বপন করা হয়। এ বছরও মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। রানী স্যালুট ধানের গায়ের রং হালকা সোনালি এবং চিনি আতপের মতো আকর্ষণীয়।
এই গবেষণা কার্যক্রমে সহযোগী হিসেবে আছেন একই ডিসিপ্লিনের শিক্ষক জয়ন্তী রায় ও আবদুল্লাহ আল মামুন। তারা জানান, এর চাল রানী স্যালুটের চেয়ে আকারে অনেকটা ছোট, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। এর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হবে স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন বৃদ্ধি এবং প্রায় এক মাস আগে ফসল কর্তনযোগ্য।
- বিষয় :
- নতুন ধান
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
- খুবি