তৃতীয় দফায় ভাসানচরে ১৭৭৮ রোহিঙ্গা
'বেগ্গিন ভালা, এতারলাই এডে চলি আস্যি'

চট্টগ্রামের বোট ক্লাব থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে ভাসানচরে যাওয়ার পথে এক রোহিঙ্গা কিশোরীর অনাবিল হাসি। শুক্রবার সকালের ছবি -সংগৃহীত
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ও টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ | ২১:১৩
'ভাসানচরত বেগ্গিন ভালা, এতারলাই এডে চলি আস্যি'- এই অভিব্যক্তি ভাসানচরে চলে যাওয়া রোহিঙ্গা শাহাবুদ্দিনের। প্রমিত বাংলায় তার এ কথার মানে হলো- 'ভাসানচরের সব কিছু ভালো। তাই এখানে চলে এসেছি।'
গতকাল শুক্রবার তৃতীয় দফায় আরও এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় এই ভাসানচরে চলে গেছেন। চট্টগ্রামের বোট ক্লাব থেকে নৌবাহিনীর চারটি জাহাজে তাদের ভাসানচরের নতুন ঠিকানায় নেওয়া হয়েছে। আজ শনিবারও রোহিঙ্গাদের একটি দল সেখানে যাবে। সব মিলিয়ে তৃতীয় দফায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে সেখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছায়। সেগুলোতে ছিল প্রায় ৫০০ পরিবারের এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের ঘরে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে এই রোহিঙ্গাদের বাসে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, তৃতীয় দফায় (প্রথম অংশের) এক হাজার ৭৭৮ রোহিঙ্গা গতকাল শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে। এ ছাড়া একই দিন ৩০টি বাসে আরও এক হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামে থাকার পর আজ শনিবার সকালে তাদের জাহাজে ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এরপর ২৯ ডিসেম্বর আরও এক হাজার ৮০৮ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পরিবারে ১০ জন নতুন অতিথি এসেছে। তাদের আটজন ছেলে ও দু'জন মেয়ে। স্বাভাবিক রোগে ভুগে মারা গেছেন তিনজন রোহিঙ্গা। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ভাসানচরে বর্তমানে তিন হাজার ৭৬১ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের মধ্যে ৩০৪ জন পুরোনো। তৃতীয় দফায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্থানান্তর হলে সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াবে সাত হাজারের কাছাকাছি।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে কক্সবাজার থেকে সাময়িকভাবে স্থানান্তরে ভাসানচরে এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে এক হাজার ৪৪০টি ক্লাস্টার হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন। গুচ্ছগ্রামের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে এসব ক্লাস্টার হাউস। প্রতিটি ক্লাস্টার হাউসে ১২টি গৃহ। প্রতিটি গৃহে আবার ১৬টি রুম। একেক রুমে চারজনের থাকার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে ঠাঁই দিতে শতভাগ প্রস্তুত রয়েছে ভাসানচর।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমানো নুরুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে ভাসানচরে পৌঁছে ফোনে বলেন, 'স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছি। এ চর দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এর আগে এখানে আগেই আসা স্বজনরা ভিডিও কলে এখানকার পরিবেশ দেখিয়েছিল, যা বাস্তবে দেখে আরও অনেক ভালো লেগেছে।'
তিনি জানান, এখানে সরকার আবাসন সেন্টারগুলো অনেক সুন্দর করে গড়ে তুলেছে। আশপাশের পরিবেশও ভালো। উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে প্রায়ই মারামারি হয়। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে চলে এসেছি।
জাহাজে ওঠার আগে রিয়া খাতুন নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, তার চার সন্তান। তাদের নিয়ে তিনি ভাসানচরে যাচ্ছেন। সেখানে তার অন্য স্বজনরা রয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। সেখানকার চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।