সমকালে সংবাদ প্রকাশ
চট্টগ্রাম নগরীর ‘ফুসফুস’ রক্ষায় বিশিষ্টজনদের বিবৃতি

আগে প্রকাশিত নিউজের কপি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১ | ০৯:০২ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ | ০৯:০৫
চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করতে রেলওয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ১৮ বিশিষ্টজন। একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনও (ক্যাব)।
গত শুত্রবার সমকালে ‘চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুসে গাছ কেটে হাসপাতাল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। দ্রুত এ হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, সংবাদমাধ্যমের খবরে জানতে পারলাম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিআরবি-সাত রাস্তার মোড় এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি করেছে রেলওয়ে। এটা চট্টগ্রামের মানুষকে অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। এর কারণ বহু।
তারা বলেন, হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবেই অসুস্থ মানুষের সমাগম হবে, যা এলাকার পরিবেশকে প্রভাবিত করবে। আর তাতে সাধারণের স্বাস্থ্য, প্রাতঃভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। এছাড়া একজন রোগীকে কেন্দ্র করে বহুজনের আগম হবে। এতে এলাকাটির নির্জনতাও ক্ষুণ্ন হবে।
সিআরবি এলাকার গুরুত্ব প্রকাশ করে আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবেই গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত এ পাহাড়ি নগরীটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিকদের মনোযোগ ও প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এ আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ এলাকাটি।
কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকায় ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিল। এছাড়া সিআরবি ভবনটি স্থাপত্যকলা ও ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব বিবেচনা করেই এলাকাটিকে ‘ঐতিহ্য ভবন’ ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
মনে রাখতে হবে অবকাঠামোগতভাবে দ্রুত বর্ধমান এ নগরে রাজধানী ঢাকার মতো রমনা পার্ক নেই, নেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো সবুজে ঘেরা কোনো বড় অঞ্চল। নগরের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র এই একটি এলাকা।
তাই সব দিক বিবেচনা করে দ্রুত এ হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্নিষ্টদের সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
বিবৃতিদাতারা হলেন, শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী, অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. সিকান্দার খান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অধ্যাপক আবুল মনসুর, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক হরিশংকর জলদাস, অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম, ডা. চন্দন দাশ, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, অধ্যাপক অলক রায়, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান প্রমুখ।
এদিকে সিআরবিতে কংক্রিটের আগ্রাসন রোধে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ। তারা হলেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন>> সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান