শফিকুলের এগিয়ে চলা
রেণু পোনায় সোনা

বগুড়ার কাহালুতে শাহ্ সুলতান শাহ্জালাল হ্যাচারি- সমকাল
এসএম কাওসার,বগুড়া
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৩:২৩
মাছের রেণু উৎপাদন শুরু করে পরপর পাঁচবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম। বাবা বছির মণ্ডল তাকে বলেছিলেন, 'তোকে দিয়ে এসব কিছু হবে না, আবার চালের ব্যবসা শুরু কর।' কিন্তু হাল ছাড়েননি শফিকুল। ষষ্ঠবারের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আর। একের পর এক সাফল্য এসেছে তার ব্যবসায়। সঙ্গে পদক ও পুরস্কার। ২০০২ সালে দেশসেরা রেণু পোনা উৎপাদক হিসেবে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০২১ সালে এসে আবারও দেশসেরা হয়েছেন তিনি। গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছ থেকে তিনি গ্রহণ করেন দেশসেরার স্বর্ণপদক।
শফিকুলের বাড়ি বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিবিরপুকুরের লোহাজাল গ্রামে। বছির মণ্ডলের ১১ ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। তাদের পৈতৃক ব্যবসা চালের। দাখিল পর্যন্ত লেখাপড়া করা শফিকুলও চালের ব্যবসায় যুক্ত হন। তবে তার স্বপ্ন ছিল অন্য কোনো ব্যবসার। এ থেকেই শুরু করেন রেণু উৎপাদন। ১৯৯০ সালে নিজেদের একটি পুকুরে মাছ চাষ করার পাশাপাশি রেণু উৎপাদন শুরু করে পরপর পাঁচবার ব্যর্থ হন। তিন লাখ টাকার মূলধন সব শেষ করেন। বাবা তাকে ফের চালের ব্যবসায় যোগ দিতে বলেন। তবে হতাশ হলেও ভেঙে পড়েননি শফিকুল। ১৯৯৭ সালের দিকে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার রেণু উৎপাদন শুরু করেন। এরপর থেকে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। হ্যাচারির নাম দেন শাহ্ সুলতান শাহ্জালাল হ্যাচারি। আগে পুকুর ছিল তিনটি, এখন হয়েছে ৩২টি। এক একর জায়গাজুড়ে রয়েছে হ্যাচারির কার্যক্রম।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, গুণগতমানের রেণু পোনা উৎপাদন এবং সফল মাছচাষি হিসেবে তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
জানা গেছে, দেশি প্রজাতির রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য শফিকুলের হ্যাচারিতে রয়েছে ১০২টি হাউস ও প্রায় ৩০টি বোতল। শুধুমাত্র দেশি প্রজাতির রেণু উৎপাদনের জন্য মজুদ রাখা আছে প্রায় ৩৫ টন ব্রুড মাছ। প্রতিবছর গড়ে তার এই হ্যাচারিতে ১০ হাজার কেজি দেশি প্রজাতির রেণু উৎপাদন করা হয়। অন্যান্য কার্প জাতীয় রেণু উৎপাদন করা হয় প্রায় ১৫ হাজার কেজি। তার হ্যাচারি ও পুকুরে কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক মানুষের।
স্থানীয় মাছচাষি ও ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, শফিকুলের দেখানো পথ ধরেই এখানে অনেকেই প্রায় বিলুপ্ত হওয়া দেশি প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেন। উপজেলার ছোট-বড় ১৬টি হ্যাচারির প্রায় সবটিতেই উৎপাদন হচ্ছে দেশি প্রজাতি মাছের রেণু পোনা।
শফিকুল বলেন, মানবদেহে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য ফিড মিলগুলোকে সরকারি নজরদারিতে রাখা উচিত, যাতে ক্ষতিকারক মাছের খাদ্য তারা তৈরি করতে না পারে। তিনি মনে করেন, দেশে মাছের উৎপাদন আরও বাড়াতে হলে সরকারি খাল, বিল, পুকুর ও জলাশয় সংস্কার ও খনন করা প্রয়োজন। সরকারিভাবে দ্রুত এই পদক্ষেপ নিলে সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ মাছের উৎপাদন অনেক বেশি হবে।
কাহালু উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, রেণু পোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্রুড মাছের গুণগতমান সব সময় ঠিক রাখেন শফিকুল। রেণু পোনার গুণগতমান ভালো হলে মাছের উৎপাদনও ভালো হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার আনোয়ারুল কবীর জানান, ২০২০ সালে বগুড়া জেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮৪ হাজার টন, যা মোট চাহিদার চেয়ে ৯ হাজার ৮৪০ টন বেশি। মাছের পাশাপাশি রেণু উৎপাদনও বেড়েছে। গত বছর জেলায় দুটি সরকারি ও ১১৫টি বেসরকারি হ্যাচারিতে এক লাখ ৩৫ হাজার কেজি রেণু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুণগতমানের রেণু উৎপাদন হয়েছে শফিকুল ইসলামের হ্যাচারিতে।
- বিষয় :
- রেণু পোনা