কব্জি দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা মোবারকের

কবজি দিয়েই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মোবারক। ছবি: সমকাল
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২১ | ০৬:১১ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ | ০৬:৩৯
জন্ম থেকে দুই হাতের কবজি ছিল না মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বাবা-মা। কি হবে তাকে দিয়ে। মোবারক আলী যত বড় হচ্ছিল মা মরিয়ম বেগমের দুশ্চিন্তায়ও তত বাড়ছিল। তবে হাল ছেড়ে দেননি তিনি। বিচলিত হলেও ভেঙে পড়েননি। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন । দুই হাতের কব্জি এক করে খাতায় লেখার কৌশল শিখিয়েছেন। এ ভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। জেএসসিতেও (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) একই ফলাফল তার। এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই আশা তার।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। জন্মের পর থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে উঠে। তার দুটো হাত অচল হলেও কখনও দমেনি এ লড়াকু সৈনিকের লেখা পড়া। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন এবারও।
সোমবার সকালে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসাবে উচ্চতর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে। তার রোল নম্বর ২১৫৭৭৩। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়তি সময় লাগেনা তার। অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হল ত্যাগ করছেন।
মোবারক আলী মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। নিজের কাজ নিজেই করে। ইচ্ছাশক্তিও প্রবল। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকলে তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোবারক আরী বলেন, হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভাল রেজাল্ট করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্বল করতে পারি।
কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক খুবই মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে।
ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, মোবারক অন্য শিক্ষার্থীদের মতই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে।