ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সিনহা হত্যা মামলার রায়ের পর কক্সবাজারে পুলিশের ভাবনা

'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা ভুলতে চান অনেকেই

'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা ভুলতে চান অনেকেই

ফাইল ছবি

আবু তাহের, কক্সবাজার

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৩:৫০

সিনহা হত্যা মামলায় রায়ের পর কক্সবাজারে পুলিশের মাঠপর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। পুলিশের কারও কারও ভাষ্য, এই ঘটনার পর মাদকবিরোধী অভিযানে খুব বেশি সতর্ক পুলিশ। কোনো মাদক কারবারি এর সুযোগ নিতে পারে। আবার পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তা ঝুঁকি নিয়ে আগ বাড়িয়ে অভিযান পরিচালনা করতে নাও চাইতে পারেন। তবে পুলিশের অন্য একটি অংশ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ঘটনাকে তাদের 'ব্যক্তিগত' দায় হিসেবে দেখছেন।
'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা বিবেচনায় এটাকে ভুলে বাহিনী হিসেবে পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রণে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে হয়তো নতুন নতুন কৌশল নিয়ে ভাবা হবে। আর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় পুলিশের সাত সদস্যের বেকসুর খালাসকে তারা 'ইতিবাচক' হিসেবে দেখছেন। সিনহার ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসনও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দু-চারজন ছাড়া একযোগে জেলার সব পুলিশ সদস্যকে গণবদলি করা হয়েছিল। কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন এখনও এক ধরনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেছেন, পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। চেইন অব কমান্ড মেনে পুলিশ সদস্যরা কাজ করে থাকে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে না। তিনি বলেন, সিনহা হত্যা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনের স্বাভাবিক নিয়মে এর বিচার হয়েছে। কারও সাজা হয়েছে, অনেকে আবার খালাস পেয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের মাঠপর্যায়ে কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না। পুলিশ স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশ সুপার বলেন, আইন মেনে কাজ করলে কোনো সমস্যা হয় না। আইন-বিধিই পুলিশের রক্ষাকবচ। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়। সিনহা হত্যার ঘটনায়ও তাই হয়েছে।
অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিনহা হত্যার পর পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কিছুটা ভীত। এই ঘটনার পর মাদকবিরোধী অভিযান গতি হারিয়েছে। অনেক কর্মকর্তা ঝুঁকি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নয়। অনেকে গা-ছাড়াভাবে অভিযানে অংশ নিচ্ছে।
টেকনাফে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওসি প্রদীপ এক সময় যাদের দৃষ্টিতে হিরো ছিল, তারাই এখন তার নিন্দায় উঠেপড়ে লেগেছে। লিয়াকত-প্রদীপের নিন্দা করতে করতে তারা এখন পুলিশ বাহিনীর নিন্দাও শুরু করেছে।
সিনহা হত্যার পর কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ আগের মতো সক্রিয় নয়- মন্তব্য করেছেন একজন মানবাধিকার কর্মী। গত জানুয়ারি মাসে মাদকবিরোধী অভিযানের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, টেকনাফে বিজিবি গত এক মাসে যেখানে ৯০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করেছে, সেখানে পুলিশ উদ্ধার করেছে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের মাদক। মাদকের গডফাদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে পুলিশ আগের মতো তৎপর নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মাদক কারবারিদের অনেকে জেল থেকে বের হয়ে আগের পেশায় ফিরে গেছে। তাদের ধরতে পুলিশ আর উৎসাহী নয়।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিনহা হত্যার পর পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে সক্রিয় নয়- এ তথ্য সঠিক নয়। জেলায় পুলিশের সবাই নতুন। তাদের তথ্য-প্রমাণ নিতে কিছুটা সময় লাগছে। এখন পুলিশ গুরুত্বেও সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তিনি এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে মাঠপর্যায়ে পুলিশ বাহিনী আগের মতোই নির্ভয়ে কাজ করছে।

আরও পড়ুন

×