কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি দেয়নি ভারত চীন ও রাশিয়া

কোলাজ
আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৫১ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৩:১২
দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়া বড় তিন দেশ। বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করা হয় এসব দেশকে। তবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট বিশেষ করে বিদেশি মুদ্রার নাজুক মজুত পরিস্থিতিতেও গত অর্থবছরে কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি এসব দেশ।
সার্বিকভাবে গত অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে। এ বাস্তবতার মধ্যেই ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর পক্ষ থেকে নতুন ঋণের ক্ষেত্রে সাড়া পাওয়া যায়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ১৯২ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৭২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ৮৮০ কোটি ডলার।
বার্ষিক ঋণ প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বিষয়ক এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছর বড় উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সবচেয়ে বেশি ২৯৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২৬২ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০৪ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান সরকার। এশীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৪০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুত বাকি ২৭২ কোটি ডলার দেবে অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা।
ভারত, চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি না পাওয়ার কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, তিনি মনে করেন, কুটনৈতিক কারণে হয়তো এসব দেশ নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভূরাজনীতির চেয়ে অর্থনীতিই এর বড় কারণ হতে পারে। বরং গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো ঋণের অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকতে পারে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীরা। আগে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে দেওয়া ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ভারতের পুরোনো প্রতিশ্রুতির অর্থ এখনও ছাড় হয়নি। এ কারণে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রয়োজন হয়তো পড়েনি। আর চীনেরও প্রতিশ্রুত অর্থের বড় একটা অংশ ছাড় হয়নি। এ ছাড়া চীন হয়তো দ্বিপক্ষীয়ের চেয়ে বহুপক্ষীয় অর্থাৎ এআইআইবির মাধ্যমে ঋণ দিতে চায়।
ইআরডির পরিসংখ্যান বলছে, নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি না দিলেও পুরোনো ঋণের অর্থছাড় করেছে ওই তিন দেশ। এর মধ্যে ভারত ৩০ কোটি ডলারের মতো অর্থছাড় করেছে। চীন করেছে ৩৯ কোটি ডলার এবং রাশিয়া প্রায় ১৩০ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে। আইডিবি ২১৬ কোটি এবং এডিবি ২১৫ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে। রাশিয়া যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে, তার পুরোটাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় দেশের ১২ জেলায় ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনটি এলওসির আওতায় মোট ৭৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত।
চীনা অর্থায়নে বর্তমানে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ঢাকা সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলার প্রকল্প সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এ অর্থে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তখন চার বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে দুটি প্রকল্প পরে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। গত আট বছরে চীন থেকে মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো সহায়তা পাওয়া গেছে। প্রতিশ্রুত ২৭ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৯ প্রকল্পের বিপরীতে এ সহায়তা পাওয়া গেছে।
- বিষয় :
- ব্যাংক