স্মার্ট দেশে অ্যানালগ ভোগান্তি চরমে

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৬:২১
জন্মনিবন্ধন নিয়ে বছরখানেক ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশবাসীকে। প্রক্রিয়া শুরু করতেই সার্ভার ডাউন হয়। সেবাটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহের বিকল্প উপায় নেই। একটি সনদ জোগাড় করতে কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস ঘুরতে হচ্ছে আবেদনকারীকে। সময়মতো সনদ না পাওয়ায় বিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদেশ গমনসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মিলছে না কোনো প্রতিকার। বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), কোনো ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সেবায়। যদিও ইতোমধ্যে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করেছে দেশ।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৪ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা, সমন্বিত উদ্যোগ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে এই অবকাঠামোর প্রকৃত সেবা মিলছে না। এতে ডিজিটাল সুবিধার পরিবর্তে ভোগান্তিই হচ্ছে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে দেশেজুড়ে আজ মঙ্গলবার পালন করা হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করে, তার শিরোনাম ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর এই রূপকল্প জাতির সামনে উত্থাপন করেন শেখ হাসিনা। সরকার গঠনের পর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ দিনটিকে ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন শুরু করে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে দিবসটির নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’। গত ৭ আগস্ট মন্ত্রিসভা কমিটি সেই নাম বদলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ বলছে, গত এক যুগে দেশে ইন্টারনেটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার বেড়েছে। অনলাইনে মিলছে অনেক সেবা। ভার্চুয়াল লেনদেন বেড়েছে। ভার্চুয়ালি সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে অপটিক্যাল ফাইবার। ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টার ও ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে ৬০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে। ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। সরকারি ওয়েবপোর্টাল তথ্য বাতায়নে যুক্ত আছে ৪৬ হাজারেরও বেশি সরকারি অফিস। ৪৬টি হাই-টেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। দেশে ফ্রিল্যান্সার আছে ছয় লাখ। বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল আট লাখ। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১৯ লাখে। মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। পদে পদে ভোগান্তি। বলার মতো উন্নয়ন হয়তো হয়েছে; কিন্তু এটা বলা যায় না– দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে। সেখানে স্মার্ট দেশ বলা অযৌক্তিক।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, এক যুগে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, যা কল্পনাই করা যেত না। আসলে আরও অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল। এখন আমাদের উচিত বিগত বছরগুলোতে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলো নিয়ে নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ করা। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই মিলে একটি কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া। তাহলে হয়তো স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
- বিষয় :
- ডিজিটাল বাংলাদেশ