শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মে নেই ৮৩ লাখ তরুণ-তরুণী
বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ

লোগো
আবু হেনা মুহিব
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০২:৪৩
কোনো রকম শিক্ষা, কর্ম বা প্রশিক্ষণে নেই (এনইইটি)– দেশে এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৮২ লাখ ৬০ হাজার। এ ধরনের যুবক-যুবতীর সংখ্যা আবার গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি। শহরে এ হার ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ। গ্রামে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অর ট্রেইনিং অর্থাৎ কোনো শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণে নেই (এনইইটি)– এমন যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর হার অতি-উচ্চ। এ হার প্রায় ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে এ হার ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে নারীর হার এত বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিবিএস মনে করে, এ বয়সী নারীদের অনেকে গৃহস্থালি কাজ বেশি করে থাকেন, যেখানে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বাধাও রয়েছে। এ কারণে এত বেশি সংখ্যক যুব নারী কোনো রকম শিক্ষা, কর্ম বা প্রশিক্ষণে নেই।
বিবিএসের প্রতিবেদনের দেখা যায়, দেশে কর্মক্ষমদের মধ্যে ২৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই ১৬ লাখ ৪০ হাজার। নারী ৮ লাখ ২০ হাজার। জাতীয় বেকারত্বের হার এখন ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
দেশে কর্মক্ষম পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। ২০২৩ সালের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী কর্মক্ষম নারী ৬ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার। সব মিলিয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তবে কর্মক্ষমদের মধ্যে কাজে নিয়োজিত নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি। কর্মক্ষমদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার। নারীর এ সংখ্যা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার। দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার বর্তমানে শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বেকারত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতি অনুসরণ করে থাকে বিবিএস। কর্মক্ষম তবে কোনো কাজে নিয়োজিত নয়, কাজ খুঁজে বেড়ায় এবং সুযোগ পেলে কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত থাকে– এ ধরনের ব্যক্তিকে বেকার বলা হয়। তবে সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয় না। পরিবারের জন্য হাঁস-মুরগি পালন করলেও তাকে বেকার বলা যাবে না। এমনকি উৎপাদনশীল কাজে মজুরি না পেলেও তাকে বেকার বলা হয় না। ১৫ বছর এবং বেশি বয়সীদের শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
জরিপে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং পদ্বতিতে (সিএপিআই) তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সারাদেশে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক নমুনা এলাকাকে জরিপের তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে দ্বৈব চয়নের ভিত্তিতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। চার প্রান্তিক মিলে পরিবারের মোট সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপ বলছে, দেশে যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার জন। এখানে নারী-পুরুষ অনুপাত প্রায় সমান সমান। পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ। আর নারীর সংখ্যা ১ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার। মোট শ্রমশক্তিতে যুব শ্রমশক্তির অংশ ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের শ্রমশক্তিকে যুব শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বিবিএস।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে নারী-পুরুষের বেতন বা মজুরির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। পুরুষরা নারীর তুলনায় মাসে গড়ে ৩ হাজার ৬৫৮ টাকা বেশি পায়।
জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, একজন পুরুষের মাসিক গড় বেতন বা মজুরি ১৪ হাজার ৪৮৯ টাকা। যেখানে একজন নারীর মাসিক মজুরি ১০ হাজার ৮৩১ টাকা। কর্মে নিয়োজিতদের মাসিক গড় বেতন বা মজুরি ১৩ হাজার ৮৬৫ টাকা। ব্যবস্থাপক পর্যায়ে নিয়োজিতদের মাসিক গড় বেতন ছিল ৩৩ হাজার ৮৬৮ টাকা।
- বিষয় :
- বিবিএস