চীনের ওপর বৃদ্ধি, অন্য দেশের শুল্ক স্থগিত ট্রাম্পের

ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:৫৬ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ০৭:৩১
বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া শুল্কযুদ্ধ নিয়ে নতুন ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চীন ছাড়া নতুন আরোপ করা পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। এই সময়ে দেশগুলোর পণ্যে পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। আর চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের হার ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র করলেন।
বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনের ওপর শুল্ক বাড়াচ্ছেন, যাতে বেইজিংকে আলোচনার টেবিলে আনা যায়। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
শুল্ক স্থগিত করার অনুরোধ রাখায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট মেনশন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করতে আমরা যে অনুরোধ করেছিলাম, তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সমর্থন জানাতে আমরা আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’ এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান ড. ইউনূস।
শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বকে অস্থির করে তোলার এক সপ্তাহের মাথায় বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে তা স্থগিতের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, চীন বিশ্ববাজারের প্রতি যে অশ্রদ্ধা দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ নির্ধারণ করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে– যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ট্রাম্প লিখেছেন, প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এই সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এর আগে চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্য আমদানিতে আগের ৩৪ শতাংশের সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। আকাশচুম্বী এ শুল্কহার বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এটি পুরো বিশ্ব-অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দেয়।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজারে পতন দেখা দেয় এবং জ্বালানি তেলের দাম কমে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। তবে চীন বাদে অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় তাৎক্ষণিক বিশ্ব-অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে নিম্নমুখী থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পুঁজিবাজারগুলোর সূচক ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ ছাড়া কানাডা, মেক্সিকোসহ অনেক দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। যদিও দিনের শুরুতে এশিয়া, ইউরোপসহ বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত ছিল।
একই সঙ্গে দাম বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের। এর আগে চাহিদা পতনের শঙ্কায় ব্রেন্ট ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ৬ শতাংশেরও বেশি কমে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলার ৮০ সেন্ট এবং ডব্লিউটিআইর ক্রুডের দাম ৫৫ ডলার ৫৫ সেন্টে নেমেছিল।
শুল্ক স্থগিতের খবরে জ্বালানি তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪ ডলার ৬৪ সেন্ট এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ৬১ ডলার ৫০ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। দর বেড়েছে ডলারেরও। জাপানি মুদ্রা ইয়েনসহ বিশ্বের প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। বুধবার দিনের শুরুতে ডলারের দর নিম্নমুখী ছিল।
এর আগে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তাঁরই উপদেষ্টা ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক এ নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছিলেন। এ ঘটনার পর শুল্কনীতি নিয়ে ট্রাম্প শিবিরে গৃহদাহের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। ইলন মাস্ক মঙ্গলবার ট্রাম্পের বাণিজ্যবিষয়ক প্রধান পরামর্শক পিটার নাভারোকে সরাসরি ‘নির্বোধ’ ও ‘অকাট মূর্খ’ বলে আক্রমণ করেন। নাভারো সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মাস্ককে ‘গাড়ি সংযোজনকারী’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, মাস্ক যা কিছু করেন, সবই তাঁর ‘নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা’র জন্য। পরে কড়া ভাষায় এর প্রতিক্রিয়া জানান মাস্ক।
এর আগে গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ মাত্রার এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।