বিএনপিএসের সংলাপে বিশিষ্টজন
নারীর নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার সময়সীমা বাড়াতে হবে

সংলাপ চলাকালীন একটি চিত্র
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২ | ০৮:১৬ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২ | ০৮:১৬
বাংলাদেশে নারীর প্রতি নানা ধরনের সহিংসতা বাড়ছে। মানুষ কোথাও জাতিগত সহিংসতার শিকার হচ্ছে, কোথাও ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এই সহিংসতার কারণেই বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। তাই নারীর সুরক্ষায় শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার (২০১৯-২০২২) সময়সীমা বাড়ানো, অতিসত্বর পরিপত্র জারি করা, বার্ষিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্তি ও বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইউএন ওমেন-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৯-২০২২)-এর বাস্তবায়ন’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে বিশিষ্টজন এ দাবি জানান।
ইউএন ওমেন রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ৭৪ কোটি (৭৪০ মিলিয়ন) নারীর প্রতি তিনজনে একজন নির্যাতনের শিকার। নারীর প্রতি সহিংসতা-নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম প্রতিবন্ধক। এটা কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। বৈশ্বিক সমস্যা। সরকারের বিভিন্ন মেশিনারিজ, জিও, এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি লিডার, মিডিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা।
তিনি বলেন, নারীর শান্তি ও সুরক্ষার বিষয়গুলো আমাদের জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালায় আছে। তবে এই নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য ও কাজের কথা বলা আছে। যেটা যে কোনো সংঘাতময় ও দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে নারীর চাহিদা, নারীর নিরাপত্তা এবং নারীর অংশগ্রহণের পথকে সুনিশ্চিত করবে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা মাল্টি-সেক্টোরাল প্রজেক্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যমান এ সকল কাজের সমন্বয় করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনসহ সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নেই, কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজ বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার। এই বৈষম্য, সহিংসতা ও দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির মূলে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ, জনমনে গণতন্ত্র সম্পর্কে একপেশে ধারণা ও চর্চা এবং নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা যা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এসব মূল কারণগুলোতেই কাজ করা প্রয়োজন। অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মসূচিসমূহ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আওতাভুক্তকরণ এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বাজেটেও আওতাভুক্তকরণের জন্য অতিসত্বর পরিপত্র জারি করা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৯-২০২২) বাস্তবায়নে সমন্বয় সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে এবং পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, নারী সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হবে, যারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন বলেন, ইউএন পিস কিপিং মিশনে বাংলাদেশ রোল মডেল। ইউএন পিস কিপিং মিশনে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার পিস কিপিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন যার মধ্যে দুই হাজার ৩০০ জন নারী। বাংলাদেশ নারীরা বিশ্বের শান্তি রক্ষায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছেন। তবে, পিস কিপিং মিশনের মাধ্যমে শান্তি রক্ষায় যথেষ্ট নয়। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তায় যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে এতে আন্তর্জাতিক, জাতীয়, স্থানীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদে, সম্পত্তির উত্তরাধিকারে, সন্তানের অভিভাবকত্বে, ব্যক্তি অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা নেই। নারীর জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে ব্যক্তি জীবনে নারীর প্রতি এসব বৈষম্যের নিরসন করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউএন ওমেন-এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টটেটিভ দিয়া নন্দা, রিব-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শিপা হাফিজা, পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউএন) তৌফিক ইসলাম সাতিল, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমেনা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি আশীষ কুমার সাহা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাইসা ইসলাম প্রমুখ।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক শাহনাজ সুমী এবং ইউএন ওমেনের প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং অ্যানালিস্ট তানিয়া শারমীন।