ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

গ্রাম আদালতে ৮৪ ভাগ মামলা নিষ্পন্ন

গ্রাম আদালতে ৮৪ ভাগ মামলা নিষ্পন্ন

প্রতীকী ছবি।

ওয়াকিল আহমেদ হিরন

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৪:১৬

গ্রাম আদালতের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে গড়ে সময় লাগে ২৫ দিন। মামলার আবেদন ফি, যাতায়াত খরচসহ সব মিলিয়ে খরচ ২৩৩ টাকা। বিচারিক আদালতের চেয়ে অনেক কম খরচ এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ফলে গ্রাম আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

গ্রাম আদালত প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০টি জেলার ১৫৪টি উপজেলায় ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে স্থাপিত গ্রাম আদালতে হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার মামলা। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার মামলা। অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ মামলার সমাধান হয়েছে। রায় বাস্তবায়ন হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার মামলার, যা গড়ে ৯৩ শতাংশ। অবশিষ্ট মামলা বাতিল, খারিজ, আবেদন ফেরত বা উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালত থেকে গ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে ১১ হাজার ৬৬৯টি মামলা। এ সময়ে দেড়শ কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ। সব মিলিয়ে প্রান্তিক মানুষের কাছে গ্রাম আদালত ভোগান্তি হ্রাসের সুযোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের কার্যক্রম শুরু হলে এর সুফল পেতে শুরু করে প্রান্তিক মানুষ। ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন সংসদে পাস করা হলেও ২০১৩ সালে তা সংশোধিত হয়।

গ্রাম আদালতের আওতায় রয়েছে চুরির টাকা আদায়, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা মুল্য আদায়, ধ্বংস করা জিনিসের ক্ষতিপূরণ, গবাদি পশু কারও ফসলহানি করলে ক্ষতিপূরণ আদায় ইত্যাদি। কম খরচে কম সময়ে গ্রামের ছোটখাটো অপরাধের বিচারের জন্যই গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠিত।

আদালতের কার্যক্রম শক্তিশালী করতে 'অ্যাক্টিভেটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ' পাইলট প্রকল্পের (২০০৯-২০১৫) অর্জিত সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে সরকার ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় সাড়ে ৬ বছর মেয়াদি (২০১৬-'২২) বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প ৩০টি জেলার ১৫৪টি উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করছে। অবশিষ্ট জেলায় পর্যায়ক্রমে গ্রাম আদালত চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ড. মলয় চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিভিন্ন জেলায় পাইলট প্রকল্পভুক্ত ইউনিয়নে গ্রাম আদালত চলমান। এতে জনগণ সুফল পাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ এ আইনের আওতায় নিয়মিত গ্রাম আদালত পরিচালনা করলে ছোট ধরনের অভিযোগ থানা বা জেলা আদালতে দায়ের করার প্রয়োজন হবে না। এই আদালত চালাতে কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন হয় না। গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের ফলে দেশের মূলধারার বিচারিক আদালতে মামলাজট হ্রাস পাবে। কমে যাবে গ্রামের মানুষের মধ্যে শত্রুতাও।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, শিগগির সারাদেশে একসঙ্গে গ্রাম আদালত চালু করা হবে। এ জন্য আর্থিক সাহায্য দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্রাম আদালতে দেওয়ানি মামলার ফি ১০ টাকা এবং ফৌজদারি মামলার ফি ২০ টাকা। বিচারের রায়ে দুই পক্ষকে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ডে গ্রাম আদালত রয়েছে।

আরও পড়ুন

×