রূপপুরের পণ্যবাহী রুশ জাহাজ যাচ্ছে চীন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ২৩:৪৪
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের সরঞ্জাম নিয়ে আসা রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ 'উরসা মেজর' শেষ পর্যন্ত যাচ্ছে চীনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া জাহাজটি বাংলাদেশে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতে খালাসের চেষ্টা করে। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে সেটি চীনের পথে রয়েছে।
এদিকে গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার জাহাজ পাঠাবে তা বাংলাদেশ আশা করেনি। জাহাজের পণ্য খালাস নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমরা রাশিয়াকে বলেছি তাদের যে জাহাজগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, সেগুলো ছাড়া অন্য জাহাজে পণ্য পাঠাতে। নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা জাহাজ গ্রহণ করতে চাই না। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমাদের কাছে তাজ্জব লেগেছে, রাশিয়া জেনেশুনে জাহাজের নাম পরিবর্তন করে পাঠিয়েছে'।
তাৎক্ষণিক জাহাজের অবস্থান শনাক্ত সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের ১৫ জানুয়ারির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝসমুদ্রে নোঙর অবস্থায় ছিল। সেটি রুট পরিবর্তন করে চীনের সায়েনথো বন্দরের (সিএনএসটিজি) দিকে যাচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি জাহাজটির এই বন্দরে পৌঁছানোর কথা।
জাহাজের মালপত্র খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটমের পক্ষ থেকে সমকালকে জানানো হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার পূর্ণ দায়িত্ব তাদের। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজ পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে তারা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পার্টনারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম লজিস্টিক্স রুট খুঁজে বের করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উরসা মেজর জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, ওই জাহাজটি আসলে উরসা মেজর নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা 'স্পার্টা ৩ এ' জাহাজ। রং ও নাম বদল করে জাহাজটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে 'স্পার্টা ৩ এ'র সনদ নম্বর। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়।
বাংলাদেশে ভিড়তে না পেরে জাহাজটি এ মাসে ভারতের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। ভারতে পণ্য খালাস করতে না পারলেও জাহাজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ভেবেছিল ভারতে পণ্য খালাস করে তা বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। তবে মার্কিন চাপে পণ্য ভারতে খালাস করতে দেওয়া হয়নি, তাই সেটি ফেরত যেতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চান, রাশিয়ার জাহাজ ফেরত দেওয়াকে কেন্দ্র করে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে যাচ্ছে কিনা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'একটু দেরি তো হবেই। ভারতে খালাসের কথা বলা হচ্ছে। এ রকম বার্তা আমাদের কাছে ছিল না। এটা বাণিজ্যিক বিনিময়ের বিষয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো আইনসিদ্ধ পদ্ধতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আশা করি সেটা হবে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিষয়টা দেখবেন এ প্রকল্পের ধীরগতি হবে কিনা'। তিনি বলেন, সেই জাহাজটিকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। একই কারণে ভারতে পণ্য খালাস করতে পারেনি।