ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে হতাহত

অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে হতাহত

তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:৫৩ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:৫৩

পেশাগত নিরাপত্তা ও মানসম্মত কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে দেশে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও অনিরাপদ বহু কর্মক্ষেত্র। গত দুই দশকে শিল্পকারখানা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে; তবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু রোধ করা যায়নি। প্রতিনিয়ত কর্মস্থলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তদারকি সংস্থার নানা সীমাবদ্ধতা, মালিকদের অবহেলা, শ্রমিকদের সচেতনতার অভাব, শ্রম আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া এবং এ আইনের দুর্বলতার কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে আইনের কার্যকর প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে মালিক ও কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।

এমন পরিস্থিতে অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস। ‘নিশ্চিত করি শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলি স্মার্ট বাংলাদেশ’ দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি। দিবস উপলক্ষে আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, পরিবহন, নির্মাণ, শিল্প, কৃষি, দিনমজুর, ইস্পাত, জাহাজভাঙা, পাথরভাঙা খাতে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনও সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। একই সঙ্গে দেশে কোন খাতে, কী কারণে শ্রমিকরা নিয়মিত হতাহত হচ্ছেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই সরকার হাতে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক তথ্য দিচ্ছে। বিলসের তথ্যে বলা হয়েছে, গত বছর ২০২২ সালে দেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মোট ১ হাজার ৫৩ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ৫৯৪ জন। ২০২১ সালে নিহত হন ৮৩৪ জন। ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৪৩৩ জন প্রাণ হারান।

সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে ৭৩২ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয়। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৩৮ জন। ২০২০ সালে ৪৩৩ শ্রমিকের প্রাণ হারানোর তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। গত ১০ বছরে সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র প্রাণহানির শিকার হয়েছেন ৫ হাজার ৬১২ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে উৎপাদন খাতে ২ হাজার ১৯৭ জন, নির্মাণ ১ হাজার ৪৩৯ জন, পরিবহন খাতে ৮৯৯ জন, কৃষি ১৮০ জন, সেবা খাতে ৮৯৭ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

বিশ্লেষকদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কাজ হলেও বাকি খাতগুলো এখনও নজরের বাইরে রয়ে গেছে। বিলসের পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই কর্মক্ষেত্রে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। উৎপাদন, নির্মাণ ও পরিবহন খাত সব সময় অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের তালিকার শীর্ষে থাকছে। এসব প্রাণহানি বন্ধে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসানে এলাহী বলেন, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক খাতে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। পরিস্থিতি পরিবর্তনে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করছি। আশা করছি, শ্রম পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।

আরও পড়ুন

×