ধর্ষণ মামলার আসামি হবু বর, পরে জানা গেল সবই ভুয়া

ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
অভিযুক্তদের মধ্যে ব্যবসায়ী মো. সহিদউল্যা সমকালকে বলেন, এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত ছয় বছরে বিভিন্ন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে অন্তত ১৪টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টিই তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালত আমাকে নিরপরাধ হিসেবে রায় দিয়েছেন, খারিজ হয়েছে মামলা।
ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলাটির তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, বাদীর দাবি অনুযায়ী রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকার একটি বাসায় ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। তবে তদন্তকালে বাড়ির কেয়ারটেকার অনীল জানান, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ওই নামে কোনো নারী বাসায় ভাড়া ছিলেন না। আর ধর্ষণচেষ্টার কোনো ঘটনার কথাও শোনেননি। পাশের বাড়ির মালিক মো. জামালও পুলিশকে একই রকম তথ্য দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো ঠিকানা পুলিশকে দেননি, তাঁর পেশাসহ অন্যান্য তথ্যও জানাননি। এক পর্যায়ে তিনি তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে প্রযুক্তিগত তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার সময় অভিযুক্ত সহিদউল্যা তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ছিলেন। অপর অভিযুক্ত খলিলুর রহমান খোকন ছিলেন পল্লবী থানা এলাকায়। তাদের কারও অবস্থানই ঘটনাস্থল শাহ আলী ছিল না। অথচ বাদীর দাবি অনুযায়ী, তাঁর বাসায় গিয়ে বিবস্ত্র করে ধর্ষণচেষ্টা চালান অভিযুক্তরা। তখন চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যান।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা ইয়াসমীন কান্তা মামলাটির তদন্ত তদারক করেন। তাদের পরামর্শে মিথ্যা মামলা করার কারণ জানার চেষ্টা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তখন জানা যায়, সহিদউল্যার সঙ্গে তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে জমি নিয়ে একটি পক্ষের বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী খলিলুর রহমান খোকনের সঙ্গেও তাঁর কয়েক সহকর্মীর বিরোধ রয়েছে। বিরোধের জেরে এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে ধর্ষণচেষ্টা মামলার বাদীর মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
সহিদউল্যা দাবি করেন, নোয়াখালীতে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১০৬ শতাংশ জমি কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু টাকা পরিশোধের পর জানতে পারেন, এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ ওই প্রতিবেশীর। বাকি ৫০ শতাংশের প্রকৃত মালিক অন্যরা। ফলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তখন থেকেই জমির বিক্রেতার সঙ্গে তাঁর বিরোধের সূত্রপাত। জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া বাকি টাকা ফেরত দেওয়া এড়াতে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া শুরু করেন জমি বিক্রেতা। যদিও সেগুলো শেষ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবে তাঁকে হয়রানির চেষ্টা চলছেই।