ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চোরাই পথে আনা মদ ফেরি করে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৩

চোরাই পথে আনা মদ  ফেরি করে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৩

বকুল আহমেদ

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ দেশে আনে চক্রটি। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা এসব মদ রাজধানীর গুলশান, বনানী, মহাখালী, নতুনবাজার, ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায় ফেরি করে বিক্রি হয়। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহী এসব মদে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি মদ চোরাই পথে আসার কারণে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এসব মদ ভেজাল কিনা তাও জানা যাচ্ছে না। ভেজাল হলে অবশ্যই জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ডিএনসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ভেজাল বা বিষাক্ত মদ পানে অন্তত তিনশ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে এ বছরের প্রথম চার মাসে মারা গেছেন ১৫ জন।

মদ আমদানিকারককে ডিএনসির অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হতে হয়। এ ছাড়া কোন ব্র্যান্ডের মদ আমদানি করা যাবে, সে ব্যাপারে আলাদা ব্র্যান্ড নিবন্ধন ও পূর্বানুমতি থাকতে হয়।

গত সোমবার রাজধানীর গুলশান ও হাতিরপুল থেকে একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তর বিভাগ। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৭ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– ইউসুফ আলী, গোলাম মোস্তফা ও নাদিম আক্তার। বেনাপোল ও দর্শনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আনা হয়েছিল মদের এই চালান।

ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নাদিম ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার সিদ্দিকুর রহমান ভারত থেকে চোরাই পথে বিদেশি মদ আনেন। তারা ভারত থেকে মূলত মেয়েদের পোশাক ও কসমেটিকস আমদানি করে। এর আড়ালে তারা মদ আনতেন। প্রতি সপ্তাহে একটি করে চালান আনতেন তারা। রাখতেন হাতিরপুলে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এরপর সেই মদ পাইকারি বিক্রি হতো। জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি তাদের বড় ক্রেতা। জাহাঙ্গীর সেই মদ তার বোনজামাই ইউসুফ আলী ও গাড়িচালক গোলাম মোস্তফাকে দিয়ে গুলশান, বনানী, নতুনবাজার, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করেন। নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্টে গাড়িতে মদ নিয়ে তারা অপেক্ষা করেন। ক্রেতারা সেখান থেকে কিনে নেন। আর বেশি অর্ডার করলে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় গাড়িতে করে। পরিচিত ক্রেতার বাইরে কারও কাছে তারা মদ বিক্রি করতেন না। যে মদ (ব্ল্যাক লেবেল হুইস্কি) বারে বিক্রি হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা, এই চক্রটি তা বিক্রি করে ১০ হাজার টাকায়। সিভাস রিগ্যাল হুইস্কিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি বোতল মদ ৪-৫ হাজার টাকা কমে বিক্রি করত চক্রটি। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান-২ এর ৮১ নম্বর রোডে মদ বিক্রির জন্য প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে অপেক্ষা করছিলেন গোলাম মোস্তফা ও ইউসুফ আলী। গোপনে তথ্য পেয়ে ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তরের গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক সুমনুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। ৩০ বোতল বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হাতিরপুল এলাকার নাদিম ও সিদ্দিকুর রহমানের তথ্য দেন। এরপর রাতে হাতিরপুলে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় নাদিমকে। সেখানে ২৭ বোতল মদ পাওয়া যায়।

গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক সুমনুর রহমান সমকালকে বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মদের কারবারে জড়িত। তারা গাড়িতে করে ক্রেতার কাছে মদ পৌঁছে দেয়। অথচ মদ বিক্রির বৈধ কাগজপত্র তাদের নেই। সোমবার মদ জব্দ ও তিনজন গ্রেপ্তারের ঘটনায় গুলশান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

ডিএনসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জাহাঙ্গীরের ‘গডফাদার’ কবির গাজী নামে এক ব্যক্তি। কবিরের বিরুদ্ধে গুলশান ও বনানীসহ বিভিন্ন থানায় ১৮-২০টি মামলা আছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বনানী কাঁচাবাজার এলাকায় হকারের মাধ্যমে মদ বিক্রি করেন। ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল একটি চক্র চোরাই পথে বিদেশি মদ নিয়ে আসে। চক্রের এক সদস্যকে এর আগেও ৫৬ বোতলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। বেশ কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা এসব অবৈধ মদ যেন কোনো বারে না ঢোকে বা কোথাও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে নজরদারি চলছে।’

আরও পড়ুন

×