ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কেবিন ক্রু মায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরলেন আবু বক্কর

কেবিন ক্রু মায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরলেন আবু বক্কর

সাহাদাত হোসেন পরশ

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৬:২৯ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৬:৫০

‘চরম ভুল একটি পথকে সঠিক মনে করে আমি এবং আমার সন্তান একই পথে ছিলাম। আর এ কারণে আমার সন্তান আজ আমার বুক খালি করে বান্দরবানের পাহাড়ে আছে। আমি জানি না, সে বেঁচে আছে কিনা। আর কখনও দেখতে পারব কিনা। এটা মা হিসেবে আমার চরম ব্যর্থতা। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়েও আমি এটি বুঝতে পারিনি। জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড, তাদের নাম সবকিছু আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল।’

গত নভেম্বরে আবু বক্করকে ফিরে পেতে এমন আকুতি জানিয়েছিলেন তার মা আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। তিনি পেশায় কেবিনক্রু। গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতায় ঘরছাড়া তরুণকে ফেরত পেতে মায়ের এমন ব্যাকুলতা নজিরবিহীন। শেষ পর্যন্ত মায়ের আকুতিতে সাড়া দিয়েছেন আবু বক্কর। ধরা দিয়েছেন র‍্যাবের কাছে। র‍্যাবের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।  খুদে বার্তায় র‍্যাব জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠনের ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ সদস্য আবু বক্করসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। আজ বুধবার এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন র‍্যাবের মুখপাত্র।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে বলেন, ‘মায়ের আকুতিতে সাড়া দিয়ে আবু বক্কর আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে।’

নভেম্বরে সন্তানের উদ্দেশে বক্করের মা বলেন, ‘আব্বু, যদি তুমি আমার মেসেজ পেয়ে থাকো, বলতে চাই- তুমি চরম একটা ভুল পথে আছো। তুমি তোমার মাকে বিশ্বাস করতে পার। আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ করো। তোমাদের মতো অল্প বয়সিদের ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছে। তোমরা যদি আত্মসমর্পণ করো তাহলে তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তোমাদের সুযোগ দেওয়া হবে।’ সন্তানের শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। একমাত্র ছেলে আবু বক্করও উদ্বুদ্ধ হন জঙ্গিবাদে। মার্চে ওই শিক্ষকের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয় আবু বক্কর। সে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য রনির (বর্তমানে গ্লোর) মাধ্যমে চলে যান বান্দরবান। মা এমিলি ছেলের এসব বিষয় জানলেও পরিবারের সবার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন। পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর ছেলের আর কোনো খোঁজ না পাওয়ায় অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন মা। ছেলেকে ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি জানান।

র‍্যাব জানায়, বিভিন্ন সময়ে নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে জানতে পারে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামে এক তরুণ গত মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হয়। এর আগে র‍্যাবের কাছে থাকা নিরুদ্দেশের তালিকার ৫৫ জনের মধ্যেও আবু বক্করের নাম রয়েছে। ৩ নভেম্বের একটি অভিযানের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের মহিলা শাখা সম্পর্কে তথ্য পায় র‍্যাব। সে তথ্য অনুসারে জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতে পাঠিয়েছেন। পরে র‍্যাব আম্বিয়া সুলতানা এমিলিকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে চার দিন ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চালায়। এ সময় র‍্যাবের কাছে তিনি সন্তানকে ফিরে পেতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে নিজের ভুল স্বীকার করেন।

এমিলি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে খণ্ডকালীন চাকরি করেছি।’

আরও পড়ুন

×