ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ব্যাটারি রিকশা: শামীম ওসমান চান ‘বন্ধ’, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বললেন বাড়াতে

ব্যাটারি রিকশা: শামীম ওসমান চান ‘বন্ধ’, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বললেন বাড়াতে

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান (বামে) ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২০:২৭

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে ‘বাংলার টেসলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎচালিত যানবাহনকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এটাকে উৎসাহিত করার কথাও বললেন তিনি। বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সদস্য শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শামীম ওসমান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানালেও প্রতিমন্ত্রী উল্টো এগুলোকে আরও উৎসাহিত করার কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

শামীম ওসমান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘রিকশার মধ্যেও ব্যটাররি লাগানো হচ্ছে। এগুলো খুবই বিপদজনক এবং চলাচলও নিষিদ্ধ। এই অটোরিকশাগুলো চার্জ যে করা হয়, তার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি করে। তারা সাত-আটশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। এগুলো একযোগে সারা দেশে বন্ধের কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা?

জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কত দ্রুত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে ইলেকট্রিকে নিয়ে যাওয়া যায়- তারজন্য সারা বিশ্বে এখন একটা রেভুলেশন চলছে। তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনের দক্ষতার মাত্রা হলো ২০ শতাংশ। অপরদিকে ইলেকট্রিক যন্ত্রের দক্ষতার মাত্রা হলো ৮০ শতাংশ। মূলত আমরা উৎসাহিত করি বাজারে যত দ্রুত পারে ইলেকট্রিক গাড়ি আসুক। তেলচালিত বাহনে কোনো দুরত্ব যেতে যদি ১০০ টাকা লাগে, বিদ্যুতচালিত যানে সেই দুরত্ব যেতে লাগবে ২০ টাকা। বাংলাদেশে ৪০ লাখের ওপর যানবাহন আছে। যারা লেড ব্যাটারি ব্যবহার করে। এগুলো চার্জ করতে সাত-আট ঘণ্টা সময় লাগে। এগুলো যদি লিথিয়াম ব্যাটারি হয়, তাহলে লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জের স্টেশন বসানোর নীতিমালা করেছে। এ নীতিমালা করে যে কেউ চাইলে চার্জ স্টেশন করতে পারবেন। নসরুল হামিদ এই ৪০ লাখ থ্রি হুইলারকে বাংলা টেসলা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এগুলো স্থানীয়রা নিজ হাতে তৈরি করছেন। উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছেন। তাদের কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। যান্ত্রিকভাবে এতে ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু বিদ্যুৎ যেটা ব্যবহার করছে তার রিটার্ন কিন্তু অনেক বেশি। এই ৪০ লাখ রিকশাচালক যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। তারা অবশ্যই আয় করছেন। এক্ষেত্রে আমরা লেড ব্যাটারি থেকে তারা যেন লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে আসে, এটা নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প করছি। আমরা লেড ব্যাটারি নিয়ে তাদের লিথিয়াম ব্যাটারি প্রদান করব।’

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে যত পাবলিক পরিবহন (বাস) আছে। সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুতে নিয়ে আসা উচিত। খরচ কম, পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টর ১৮ শতাংশ কার্বন নি:সরণ করে। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয় উদ্বেগের। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত। কোথাও অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় কিনা বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো সেগুলোর বিষয়ে নজরে রাখছে। বেশিরভাগই এখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ না নিয়ে মিটারের মাধ্যমে নিচ্ছে।’

এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। আর গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট (৪৩ শতাংশ), ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ছয় হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট (২৪ শতাংশ), ডিজেলভিত্তিক ৮২৬ মেগাওয়াট (৩ শতাংশ), কয়লাভিত্তিক চার হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট (১৭ শতাংশ), হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট (এক শতাংশ), অনগ্রিড সৌর বিদ্যুৎ ৪৫৯ মেগাওয়াট (দুই শতাংশ), বিদ্যুৎ আমদানি দুই ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট (১০ শতাংশ)।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছর শীতকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।’

আরও পড়ুন

×