ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পোড়ার যন্ত্রণার মধ্যেও অনাগত সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় মিলি

প্রেমের প্রস্তাব না মানায় এসিড

পোড়ার যন্ত্রণার মধ্যেও অনাগত সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় মিলি

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:৩৫ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৫৫

এসিডে ঝলসানো শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিলি আক্তার (২০)। পোড়া শরীর আর যন্ত্রণা নিয়ে যতটা না তিনি চিন্তিত, তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় অনাগত সন্তান ঘিরে। গর্ভের সন্তান অক্ষত থাকবে? পৃথিবীর মুখ দেখতে পারবে তো? মিলির এমন প্রশ্ন শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না স্বজন। 

মিলি ও তাঁর মা রাশেদা বেগম রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। গত রোববার পবিত্র শবেবরাতের রাতে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের সুজাতপুরে এসিডে দগ্ধ হন তারা। স্বজন বলছেন, সুজাতপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম মানিক প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল মিলির কাছ থেকে। প্রতিশোধ নিতে মিলির শরীরে এসিড ছুড়ে মারে সে। একই ঘটনায় মিলির মা রাশেদা বেগমও দগ্ধ হন। মিলির অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলেও তাঁর মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে। এ ছাড়া গলা ও ডান হাতের কিছু অংশও পুড়ে যায়। 

এ ঘটনায় মিলির বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেন। এতে মানিক ও একই গ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী বাদলকে আসামি করা হয়েছে। বাদলও মিলিকে পছন্দ করত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। এর পর সেও দেশে থাকতে মিলিকে উত্ত্যক্ত করত। এসিড নিক্ষেপে তার ইন্ধন রয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। এক নম্বর আসামি মানিককে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড চেয়ে গত সোমবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মিলিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগের রাতেই তাঁকে ঝলসে দেওয়া হয়। 

মিলির স্বজন জানান, ১০ মাস আগে নিজের পছন্দে সৌদিপ্রবাসী মো. সায়েমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন মিলি। এর পরও মানিক তার পিছু ছাড়েনি; উত্ত্যক্ত করত। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় সায়েম স্ত্রীকে নিজেদের বাড়ি রেখে সৌদি আরব চলে যান। মিলি কয়েক দিন আগে বাবার বাড়ি যান। ফের উত্ত্যক্ত করতে থাকে মানিক। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা দিত। বিবাহিত মানিক খুদে বার্তায় মিলিকে লিখত– সন্তান হলেও তার পিছু ছাড়বে না সে। এভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি অব্যাহত রাখে মানিক। 

গত রোববার রাতে মা রাশেদা বেগমের সঙ্গে নিজেদের বাসায় নামাজ আদায় করছিলেন মিলি। রাত ১০টার দিকে তাদের দরজায় টোকা দিয়ে ‘কাকি, কাকি’ বলে মানিক ডাকছিল। মিলি দরজা খোলামাত্র মানিক এসিড ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে মা-মেয়ে উভয়েই দগ্ধ হন। ওই রাতেই তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়।
মিলির অনাগত সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে কিনা– জানতে চাইলে বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন তরিকুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকির বিষয়টি এখনই বলা কঠিন। কারণ এসিডের ক্ষত গভীরে চলে যায়। ঝুঁকিতে পড়তেও পারে, নাও পারে। এখন পর্যন্ত গর্ভের সন্তান ভালো আছে। 

মিলির চাচাতো ভাই শাকিল হোসেন জানান, মিলির চোখেও এসিড পড়েছে। এ জন্য চোখ খুলতে পারছেন না, তবে কথা বলছেন। অনাগত সন্তান নিয়ে নানা প্রশ্ন করছেন। সন্তান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। 
মিলির বাবা আইয়ুব আলী দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। বছর তিনেক আগে দেশে ফিরে চাষাবাদ শুরু করেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মিলি ছোট।

 

আরও পড়ুন

×