ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ঢাবিতে রমজানের সেমিনারে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ, আহত ৫

ঢাবিতে রমজানের সেমিনারে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ, আহত ৫

প্রতীকী ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ০২:১৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে রমজানের এক সেমিনারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আইন বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। সুজনকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এ সময় তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগও নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে যোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের নিচে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ভাষ্য, আহতরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী, তাই স্থানীয়রাই তাদেরকে প্রতিহত করেছে। তবে তারা ছাত্রলীগ থেকে মাঠে থাকবেন, কোনো ধরনের শিবিরের কার্যকলাপ তারা ক্যাম্পাসে হতে দেবেন না।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রেজওয়ান আহমেদ রিফাত, কবি জসীম উদ্দীন হলের শাহিনুর আলম রাসেল, বঙ্গবন্ধু হলের সাকিব তূর্য, ফাহিম দস্তগীর ও রাফিদ হাসান সাফওয়ান। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, আইন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে ‘পবিত্র মাহে রমজানকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন, অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি, ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং সার্বিক প্রস্তুতিবিষয়ক সেমিনার— প্রোডাক্টিভ রামাদান’ শীর্ষক কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বঙ্গবন্ধু টাওয়ার মসজিদে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সেমিনার শুরু করার পর সেখানে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক, শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন উপস্থিত হয়ে তাদেরকে বাধা দেন। পরে তারা চলে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেটের দিকে এগোলেই তাদের ওপর সুজনসহ অনেকে হামলা করেন। এদিকে সিরাজুলের ফোনে সুজনের সঙ্গে ভোর ৪টার দিকে, দুপুর সাড়ে ১২টা, ২টা ও আড়াইটার দিকে কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।  

তবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকালে তিনি ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাছির হোসেনকে প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়। সেখানে প্রোগ্রামটির ব্যানার দেখিয়ে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম করতে নিষেধ করে অন্যত্র প্রোগ্রাম করতে বলতে যান। পরে কারা হামলা চালিয়েছে তিনি জানেন না।

আহত রেজোয়ান আহমেদ রিফাত সমকালকে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে সাবলেট থাকি, ক্লাস শেষে মসজিদে নামাজ শেষে আলোচনা হচ্ছে দেখে বসি। পরে কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি এসে প্রশাসনের নিষেধ আছে বলে জানায়। বের হয়ে যাওয়ার সময় বাইকে করে ২০-২৫ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আইনের শিক্ষার্থী বলার পরও তারা থামেনি। হামলাকারীরা শাহবাগ থানা ছাত্রলীগ বলে জেনেছি, তবে আমরা তো কাউকে চিনি না।

অভিযোগ জানাবেন কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু গুরুতর আহত। তারা সুস্থ হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, আমরা প্রশাসনকে অভিযোগ দেব বা আইনি ব্যবস্থা নেব। আমরা তিন বছর ধরে ক্যাম্পাসে থাকি, কোনো রাজনীতি করি না। অথচ দেখি অনেকে শিবির বলছে আমাদের।

বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী কবির হোসেন বলেন, হামলা হলে আমি ফটক আটকে দেই। তারা মোটরসাইকেলে এসে কয়েকজনকে অনবরত কিল-ঘুসি, লাথি মারে। হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে মারছে। এরমধ্যে একজন দৌড়ে পালাতে চাইলে তাকে পুনরায় ধরে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারা হয়। এরমধ্যে সুজনকে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে জানতে সুজনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে ফোন ব্যস্ত পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, হামলার ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া তারা নিজ উদ্যোগে ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে সুজনের জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু বলেন, প্রমাণ থাকলে পাঠান। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব।

ফেসবুকে সরব সৈকত ও তার অনুসারীরা  

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সেমিনারের ব্যানারের ছবি দিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত শিবিরের নেতাকর্মীরা কার্যক্রম পরিচালনা আখ্যা দিয়ে ঢাবিতে শিবিরের কার্যক্রম চলবে না বলে পোস্ট দিয়েছেন। তার অনুসারীদেরও ফেসবুকে সরব দেখা যায়।

জানতে চাইলে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, শিবিরের পেজ থেকে এটার (হামলা) নিন্দা জানিয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসে নামে বেনামে শিবির কার্যক্রম চালিয়েছে। আজকে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে হলেও শিবিরের কার্যক্রম প্রতিহত করবে।

শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় দেখা গেছে এমনটি জানতে চাইলে সৈকত বলেন, শাহবাগ থানা কোনো কথা নয়। উচিত ছিল আমরা প্রতিহত করা। এরপর থেকে আমরা প্রতিহত করব। শিবির ভেরিফায়েড পেজ থেকে (নিন্দাজ্ঞাপন) দিয়েছে, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিবির।

তিনি বলেন, আমাদের মসজিদে সেমিনার হয় না, এটা শিবিরের সংস্কৃতি মসজিদে মসজিদে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা। ঢাবি শিক্ষার্থীরা মসজিদে সেমিনার করবে কেন, বা হলের মসজিদ আছে, কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে কেন?

এদিকে এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিখন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই হামলায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া ছাত্র ফেডারেশন ঢাবি শাখা ও ছাত্র অধিকার পরিষদ প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন

×