ভাসানচরে বন্যা জলোচ্ছ্বাসের খোঁজ নিলেন রাজকন্যা

সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ও ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত ভিক্টােরিয়া বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়ায় মালি ব্র্যাক স্কুল-৬৭ পরিদর্শন করেন। ছবি: পিআইডি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৪ | ০৩:৩৮
বাংলাদেশ সফরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। গত দু’দিন ধরে তিনি খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। দেখেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-সংগ্রাম।
গতকাল বুধবার সকালে রাজকন্যা নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচর ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল পরিদর্শন করে রোগী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাদের বসবাস করতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা জানতে চান এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অনুভূতির কথা শোনেন। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের সময় পানি ওঠা নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন করেন এবং খাবার পানি ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েও কথা বলেন ইউএনডিপির এ শুভেচ্ছাদূত।
এ ছাড়া জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিজ দেশে পুনর্বাসনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় তাদের বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করতেও দেখা যায় তাঁকে।
নোয়াখালী, হাতিয়া, কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধির পাঠানো খবর–
এর আগে গতকাল সকালে তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে ৯ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। মেঘনার তীরে বসবাসরত জেলেদের জাল বোনা, মেরামত ও জেলে পরিবারের নারীদের হস্তশিল্প কার্যক্রম পরিদর্শন, তাদের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ করলেন সুইডেনের রাজকন্যা।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি বলেন, সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রাজকন্যা হাতিয়ায় আসেন। পরে তিনি বুড়িরচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের জেলেপল্লিতে যান। সেখানে জেলেদের জাল বোনা ও জাল মেরামত দেখেন। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, জালে মাছ কম ধরা পড়ছে। এ সময় তিনি জানতে চান, জালে কম মাছ ধরা পড়ার কারণ কী? এর পর রাজকন্যা জেলেদের পরিবারের নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের হস্তশিল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং জীবন ও জীবিকার মান নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি নারীদের কাছে জানতে চান, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবনে কী কী প্রভাব ফেলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভূমিহীন পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন। কীভাবে তারা গৃহহীন হয়েছেন, তা তিনি জানতে চেয়েছেন। এর পর ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলীয় লোকজন কীভাবে তা মোকাবিলা করেন, তার গল্প শোনেন। সর্বশেষ তিনি কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেন।
হাতিয়ায় তাঁকে স্বাগত জানান নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস, হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
এ সময় সুইডিশ ক্রাউন প্রিন্সেসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব, ইউএনডিপির এক্সটার্নাল রিলেশনস ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক উলরিকা মদির, সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়োহান ফরশেল প্রমুখ।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন সমকালকে বলেন, প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়ার আগমনে আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা মনে করি, তাঁর এ পরিদর্শন আগামীর হাতিয়ার জন্য বিশাল ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গা ও জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবনযাত্রা দেখলেন রাজকুমারী
কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবনযাত্রা দেখলেন ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত ভিক্টোরিয়া। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ভাসানচর থেকে হেলিকপ্টারে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান।
সেখানে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহাফুজুল ইসলাম তাঁকে স্বাগত জানান।
প্রথমে তিনি ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন ও খাবার বিতরণের ই-ভাউচার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। শেষে ক্যাম্প ৪-এ ইউএন ওমেন এবং ইউএনএফপিএ পরিচালিত মাল্টিপারপাস উইমেন্স সেন্টার পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর ক্যাম্প-৫-এ ইউএনএইচসিআর পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন, একটি বেকারি শপ ও পাটজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং সেখানে কর্মরত নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ সময় রোহিঙ্গা নারীরা বলেন, রোহিঙ্গারা আগে যে পরিমাণ রেশন পেত, এখন তা পাচ্ছে না। এতে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধের পাশাপাশি অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
রমিদা বেগম নামে এক নারী জানান, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে এবং এ কারণেই আমরা মিয়ানমার থেকে প্রাণে বাঁচতে এ দেশে পালিয়ে এসেছি, এখন আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।
এ ছাড়া তিনি ক্যাম্প-১০-এর ইউএনডিপি পরিচালিত কার্যক্রম ও ক্যাম্প-১৮-এর আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গা কালচারাল মেমোরি সেন্টার পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে উখিয়ার ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি আমির জাফর বলেন, তিনি তিনটি ক্যাম্পের কার্যক্রম ঘুরে দেখেছেন। এ সময় রাজকন্যা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে সুইডেনের রাজকন্যা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সেখানে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবনযাত্রা দেখেন তিনি। এ আশ্রয়কেন্দ্রে উদ্বাস্তু নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
- বিষয় :
- ভাসানচর