পুলিশের তদন্তে নির্দোষ অধিকতর তদন্তে ধরা
মোহাম্মদপুরে হেরোইন উদ্ধার মামলা

ফাইল ছবি
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ০১:১৬
তিন হাজার পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার মামলার এজাহারে অন্যতম অভিযুক্ত ছিল জাহিদ কাদেরী ওরফে মোল্লা জাহিদ। তবে তদন্তে তাকে নির্দোষ দেখিয়ে অব্যাহতি চায় পুলিশ। আদালত অবশ্য এতে সম্মত হননি। তাই অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে (ডিএনসি)। তাদের তদন্তে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চিহ্নিত মাদক কারবারি জাহিদের অপরাধে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। সেই সূত্রে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এদিকে ডিএনসির তদন্তে জাহিদের সংশ্লিষ্টতা মিললেও থানা পুলিশ কেন কিছু পায়নি– এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। ‘আমার তদন্তে কিছু পাওয়া যায়নি’ বলে দায় সারছেন সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ এজাহারেই উল্লেখ ছিল জাহিদসহ দু’জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। সাক্ষী পুলিশ সদস্যও সমকালকে তেমনটিই বলেছেন।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, তদন্তে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার পলাতক অপর আসামি গোলাম কসাই ওরফে ডিলার গোলামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আদালতের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের ১২ এপ্রিল বিকেলে মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল স্থানীয় জেনেভা ক্যাম্পের ৩ নম্বর সেক্টরের মো. আজিমুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালানোর সময় মো.
আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেখানো তোশকের নিচ থেকে ৩০০ পুরিয়া হেরোইন জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার যুবক তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, পালিয়ে যাওয়া দু’জন ছিল জাহিদ ও গোলাম। তাদের কাছ থেকে হেরোইন কিনে তাদেরই তত্ত্বাবধানে জেনেভা ক্যাম্প ও আশপাশে বিক্রি করে আসছিল আকাশ।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে আদালত তা গ্রহণ করেননি। অধিকতর তদন্তের আদেশে আদালত বলেন, গোলাম কসাই ও জাহিদ কাদেরীর নাম-ঠিকানা থাকা সত্ত্বেও এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার পরও অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনসির পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য, জব্দ তালিকার সাক্ষীদের বক্তব্য, অভিযানকারী দলের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ কারণে আগের তদন্তে অব্যাহতি পাওয়া একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসি। গত সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মামলার তদন্ত করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই চয়ন সাহা। তিনি সমকালকে বলেন, আমার তদন্তে জাহিদ ও গোলামের অপরাধের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। তাই অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।
এদিকে জাহিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি এবং ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট একই থানায় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় আরেকটি মামলা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এসআই চয়ন সাহা দাবি করেন, তিনি জাহিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা পাননি। সিডিআর ঘেঁটেও তেমন কিছু মেলেনি।
তিনি তদন্তকালে কিছু না পেলেও অধিকতর তদন্তে কীভাবে জাহিদের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেল– জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেন, সেটি তাঁর জানা নেই। তিনি তদন্তে যা পেয়েছেন, তেমনই প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এদিকে এজাহারে সাক্ষী হিসেবে থাকা মোহাম্মদপুর থানার এএসআই অলি উল্লাহ জানান, অভিযানে তিনিও ছিলেন। তারা আকাশকে গ্রেপ্তার করেন এবং জাহিদসহ দু’জন পালিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে যে কয়টি চক্র, সেগুলোর একটির নেতৃত্ব দেয় জাহিদ ও গোলাম। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা দুই আসামিকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাতে পারেন।
- বিষয় :
- হেরোইন