সনদ জালিয়াতি
ব্যাখ্যা দিতে ২ দিন সময় পেলেন কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
রিমান্ড শেষে কারাগারে সেহেলা পারভীন

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ০২:৪৯
সনদ জালিয়াতির ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার ডিবি কার্যালয়ে ডেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তবে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে তাঁকে দু’দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবিপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য দুই দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন এবং সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মঙ্গলবার আলী আকবর ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেফায়েত উল্লাহকে প্রায় তিন ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে আলী আকবর খান বলেন, ‘আমার সম্পৃক্ততা বা কোনো দায়-দায়িত্ব ছিল কিনা, ডিবি তা জিজ্ঞাসা করেছে। বলেছি, আমি কিছুই জানি না। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনায় আমরা খুবই লজ্জিত ও দুঃখিত। বোর্ডের প্রধান হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বিষয়ে তারা জিজ্ঞাসা করেছে, বলেছি এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে ডিবিকে জানান আলী আকবর।
অভিযোগ পাওয়ার পরও কেন শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি– এমন প্রশ্নে আলী আকবর বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ওয়েবসাইটে এমন কোনো কাগজ আছে কিনা সেটি খুঁজে দেখেছি, কিন্তু পাইনি। ভেতরে-বাইরে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছি।’
স্ত্রীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ডিবি তার বিষয়ে কী তথ্য পেয়েছে, তাও জানি না। বিনা অপরাধে আমার স্ত্রী জেল খাটছে।’
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সনদ জালিয়াতি হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তা দেখলেন না! এটি অবহেলা, উদাসীনতা নাকি কারও দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে এসব করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সনদ জালিয়াতির যে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, তা কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করার মতো। একজন বোর্ড চেয়ারম্যানের সেই দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’ সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর ডিবির নজরদারিতে থাকবেন বলে জানান তিনি।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ‘কারা টাকা দিয়েছে, কারা সনদ নিয়েছে, কখন কাকে কী পরিমাণ টাকা দিয়েছে– সব বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে আলী আকবরের স্ত্রী সেহেলা পারভীন ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। মঙ্গলবার সেহেলা পারভীনের দু’দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর আইনজীবী আব্দুর রহমান জামিন আবেদন করলে আদালত বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন।