ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আইইইএফএ’র গবেষণা

শিল্পে জেনারেটরের দক্ষতা বাড়ালে এলএনজি আমদানিতে সাশ্রয় হবে ৪৬ কোটি ডলার

শিল্পে জেনারেটরের দক্ষতা বাড়ালে এলএনজি আমদানিতে সাশ্রয় হবে ৪৬ কোটি ডলার

ছবি: ফাইল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪ | ২০:১০

শিল্পে ব্যবহৃত ক্যাপটিভ জেনারেটরের দক্ষতা ১০% বৃদ্ধি করলে এবং নির্গত তাপ পুনঃব্যবহার ২১ শতাংশ এলএনজি আমদানি কমবে। অর্থাৎ বছরে সাশ্রয় হবে ৫০.১৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এতে সরকারের সাশ্রয় হবে ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। 

ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ সোমবার আইইইএফএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় ৫১টি শিল্প কারখানার প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১২৪টি গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক ড. শফিকুল আলম এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শিল্প খাতে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় দক্ষতা ৩৫.৩৮ শতাংশ, এবং উচ্চ দক্ষতার জেনারেটর ব্যবহারে এটি ৪৫.২ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। এছাড়া পুরাতন ও অদক্ষ তথা ব্যয়বহুল জেনারেটরের বদলে জ্বালানি দক্ষ জেনারেটর লাগিয়ে এবং জেনারেটর থেকে নির্গত তাপকে কাজে লাগিয়ে আমদানি করা এলএনজি’র চাহিদা বছরে ৫০.১৮ বিলিয়ন ঘনফুট বা ২১ শতাংশ কমাতে পারে।

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক আইইইএফএ'র প্রধান বিশ্লেষক ড.শফিফুল আলম বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন এবং তার আর্থিক অভিঘাত মোকাবিলার বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়নি। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদায় অস্থিতিশীল জ্বালানি এলএনজি'র উপর নির্ভরশীলতা মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো ঝুঁকিতে পড়বে।

তিনি বলেন, গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির অদক্ষ ব্যবহারের ফলে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস খরচ হয়। গত দশকে ক্যাপটিভ জেনারেশনের গড় দক্ষতা ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫.৩৮ শতাংশে উন্নীত হলেও এ খাতে আরও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’ 

গ্যাসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতায় আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার জন্য ভোক্তাদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই জ্বালানি কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ন্ত্রণে, জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে সরকারকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জেনারেটর প্রতিস্থাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন হলেও, এই মূলধন ব্যয় উঠে আসতে দেড় থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। আর জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ পুনরায় বহারের জন্যে করা বিনিয়োগ মাত্র এক বছরেই তুলে আনা সম্ভব হবে। 

জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করলে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের জ্বালানি খাতকে আরও সুরক্ষিত ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে বৃহত্তর সহায়তা, প্রণোদনা এবং অর্থায়ন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে ধীর গতি এবং নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণে বিনিয়োগের অভাব বাংলাদেশকে বিশেষ সংকটের মুখোমুখি করেছে।

প্রতিবেদনে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বৈদ্যুতিক গ্রিডের আধুনিকায়ন করা; শিল্পে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ক্রমে সরে এসে জাতীয় গ্রিডের উপর নির্ভরতা বাড়াতে উৎসাহিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, গ্যাসভিত্তিক বেইজ লোড প্ল্যান্টের পরিবর্তে গ্যাসভিত্তিক কিছু পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

×