ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রসূতির মৃত্যু কমলেও উদ্বেগ কাটেনি

গর্ভকালীন ন্যূনতম চারবার চেকআপে অনীহা, বাড়ছে জটিলতা

প্রসূতির মৃত্যু কমলেও উদ্বেগ কাটেনি

ছবি-সংগৃহীত

সাজিদা ইসলাম পারুল

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪ | ১৪:১৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা তাসলিমা হোসেন ১৯ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বছর না ঘুরতেই অন্তঃসত্ত্বা হন। সম্প্রতি জটিলতা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাঠানো হয় রাজধানীতে। বেসরকারি একটি হাসপাতালে নবজাতককে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেও তাসলিমা নিজে না ফেরার দেশে চলে যান। স্বজনরা জানান, তাসলিমা গর্ভকালে কোনো চিকিৎসকের কাছে যাননি। ফলে সন্তান ধারণের পর থেকে তাঁর শারীরিক জটিলতার বিষয়ে কেউ জানত না। শেষ মুহূর্তে যখন জানা গেছে, চিকিৎসকরা শত চেষ্টা করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি।

তাসলিমার মতো বেশির ভাগ প্রসূতি পিছিয়ে আছেন গর্ভকালীন সেবাপ্রাপ্তিতে। এমনকি প্রসব-পূর্ব ন্যূনতম চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তারা করাচ্ছেন না। ফলে নানা ধরনের জটিলতায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

সরেজমিন রাজধানীর কুড়িল বস্তিতে দেখা যায়, গর্ভকালীন পরিচর্যায় কারও নজর নেই। বেশির ভাগ অন্তঃসত্ত্বা শেষ সময়েও প্রতিদিন কর্মস্থলে যাচ্ছেন। পরিবার থেকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। পোশাককর্মী সালেহা বেগম বলেন, রিকশাচালক স্বামীর পয়সায় সংসার চলে না। 

এ জন্য কাজে যেতে হয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে চিকিৎসক দেখানোয় আপত্তি। তারা মনে করে, বাসায় সন্তান হলে ভালো হবে।

একই চিত্র মোহাম্মদপুরের বাঁশখালী বস্তিতে। ২২ বছর বয়সী সালমা আক্তার বলেন, একবার ডাক্তার দেখিয়েছি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য কার্ড করাতে চেয়েও পারিনি। বড় বোনের সন্তান বাসাতেই হয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেলে ওষুধের প্রভাবে পেটের সন্তান বড় হয়ে যেতে পারে– এমন ধারণা থেকে মা ও শাশুড়ি বারণ করেছেন। নিজেও এখন দ্বিধায় পড়ে গেছি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে অনেক জটিলতা শনাক্ত করা যায় না। ফলে মা ও নবজাতকের প্রতিরোধযোগ্য অনেক রোগও মারাত্মক আকার নেয়। একজন অন্তঃসত্ত্বা প্রসব-পূর্ব অন্তত চারবার সেবা নিলে সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু জন্মের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কমে আসে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রসূতির মৃত্যুহার কমলেও কাটেনি উদ্বেগ। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গড়ে দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুহার কমিয়ে আনার তাগিদ রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক জরিপে বাংলাদেশে প্রসূতির মৃত্যু কমেছে। বর্তমানে দেশে প্রসূতির মৃত্যুহার ১৩৬। অর্থাৎ, ১ লাখ জীবিত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৩৬ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। শহরাঞ্চলে প্রতি লাখে ৫৬ জন হলেও গ্রামাঞ্চলে সে সংখ্যা ১৫৭।

বাংলাদেশে তিন দশকের বেশি প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা মেরী স্টোপস বাংলাদেশ। প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনা এবং জন্মহার নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অন্যতম। মেরী স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিশওয়ার ইমদাদ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী তারা গর্ভকালীন ন্যূনতম চারটি চেকআপের ওপর গুরুত্ব দেন। কিন্তু পরিবার-পরিকল্পনা এবং নিরাপদ মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা এখনও সবার কাছে পৌঁছেনি। ফলে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু কমানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, নিরাপদ ও স্বাভাবিক প্রসব নারীর অধিকার। আমরা নারীর জীবনের পর্যায়গুলো চারটি ধাপে নিয়ে সেবা দিচ্ছি। আকাঙ্ক্ষায় ডানা মেলা কিশোরী, অভিলাষী তরুণী, মমতাময়ী মা ও অগ্রজ প্রবীণা– পরিকল্পনা করে প্রতিটি ধাপে নারীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। আমাদের টোল-ফ্রি হেল্প লাইনে প্রশিক্ষিত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দেন। বিশেষ করে প্রসূতিকে তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য দীর্ঘ যাত্রায় কী কী করতে হবে, তা জানানো হয়।

আরও পড়ুন

×