নতুন করে আসছে পুরোনো মাদক

.
বকুল আহমেদ
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪ | ০১:১২ | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ | ০৭:৪১
বিভিন্ন মাদকের মধ্যে একসময় দেশে বেশি চাহিদা ছিল হেরোইন ও ফেনসিডিলের। পরে নতুন মাদকে ঝোঁকেন মাদকসেবীরা। বিশেষ করে ২০০৫ সালের পর ইয়াবার সরবরাহ ও চাহিদা বাড়তে থাকে, কমে হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন আবার পুরোনো মাদকে ফিরছেন মাদকসেবীরা। নতুনের মধ্যে টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) সিনথেটিক বিভিন্ন মাদকের চাহিদাও বেড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা জানান, নব্বই দশকে দেশে মাদকসেবীদের কাছে হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু ২০০৫ সালের পর দেশে ইয়াবার সরবরাহ বাড়তে থাকে, এতে আসক্তিও বাড়ে। ফলে ফেনসিডিল ও হেরোইনের চাহিদা কমে যায়। এখন আবার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ফেনসিডিল ও হেরোইন আসছে। পাশাপাশি আসছে টাপেন্টাডল ট্যাবলেট। গত বছরের সেপ্টেম্বরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪২ হাজার ২০০ পিস টাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ বলেন, ‘অন্য মাদকের পাশাপাশি আবার হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা বাড়ছে। ভারত থেকে এই দুটি মাদকের চালান বেশি আসছে উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে মাদক পৌঁছে দিচ্ছেন কারবারিরা। তবে নতুন করে আর যেন কেউ মাদক সেবনে জড়িয়ে না পড়েন, সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। সমকালকে বলেন, ‘‘সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তকে ‘মাদকের বিশেষ জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি মাদক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।” মাদকের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত বলে জানান তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। তবে ডিএনসি দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আগামী ১৪ জুলাই।
হেরোইন ও কোকেনের নতুন রূপ
সাধারণত হেরোইন পাউডার আকারে হয়। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডিএনসি টেকনাফে ইয়াবার চালানের সঙ্গে জমাট বাঁধা হেরোইন জব্দ করে। পরীক্ষা করে জানা যায়, পাউডারের চেয়ে জমাট হেরোইন অন্তত ১০ গুণ ক্ষমতাসম্পন্ন। এ ছাড়া দেশে নতুন ধরনের কোকেন পাওয়া গেছে, ব্ল্যাক কোকেন, যা ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। গত ১১ ডিসেম্বর ডিএনসির ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বোয়ালমারীর ভুলবাড়িয়া গ্রামে আবু বক্কার ওরফে রুবেলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫ গ্রাম আইস ও ১২ গ্রাম গুড়া ইয়াবা উদ্ধার করে। এ ছাড়া পেন্সিলের শিষের মতো ৪৪টি টুকরো জব্দ করা হয়। পরে পরীক্ষা করে জানা যায়, সেগুলো ব্ল্যাক কোকেন। তবে কীভাবে এই ব্ল্যাক কোকেন দেশে এলো, তা জানাতে পারেননি ডিএনসির কর্মকর্তারা।
৬৩ শতাংশ মাদকসেবী যুবক
সারাদেশে ডিএনসির চারটি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে গত বছর ৫১৭ জন মাদকাসক্ত চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ৩১৮ জন যুবক। এর ওপর ভিত্তি করে ডিএনসি বলছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ যুবক।
বিশেষজ্ঞ যা বলেন
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ‘শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু মাদক প্রতিরোধে দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক ঢুকছে। যেভাবেই হোক বিদেশ থেকে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে।’ তাঁর মতে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ ও মামলা
গত বছর দেশে ইয়াবা উদ্ধার হয় ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার পিস, কোকেন ১৩ কেজি, আফিম ১৫ কেজি ৬৬৩ গ্রাম, গাঁজা ১ লাখ ১২ হাজার কেজি, ফেনসিডিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৩ বোতল ও ৮২ লিটার, বিদেশি মদ ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৪ বোতল ও ১২ হাজার ৩৮ লিটার এবং ১ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ অ্যাম্পুল ইনজেকটিং ড্রাগ। এ ছাড়া ডিএনসি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানে ২০২৩ সালে উদ্ধার হয় ৭০০ কেজি ৯২৮ গ্রাম হেরোইন।