ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠের’ পুরস্কার পেলেন ৩০ শিক্ষার্থী

‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠের’ পুরস্কার পেলেন ৩০ শিক্ষার্থী

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪ | ২০:৪০ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ | ২১:১৩

প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকেরের স্মরণে ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ’ কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। গত নভেম্বরে সারাদেশে তিন মাসব্যাপী এ কর্মসূচি হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এর আওতায় শনিবার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনটি বই পাঠ ও প্রতিক্রিয়া লেখার ওপর ৩০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে প্রতি বিভাগে সেরা ১০ জনের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকার বই ও নগদ ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক পাঠককে সনদ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের চার ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর, ডা. সারওয়ার আলী, মফিদুল হক ও সারা যাকের এবং জুরি বোর্ডের সদস্য জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর, পর্বোতরোহী নিশাত মজুমদার, আলী যাকেরের ছেলে নাট্যঅভিনেতা ইরেশ যাকের ও গ্রন্থপাঠ উদ্যোগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ এবং সিলেকশন কমিটির পক্ষে সাংবাদিক ঝর্ণা মনি।

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আলোর দিকে ধাবিত হই। সমাজে ধর্মান্ধতা এত বেশি গেড়ে বসেছে, সেখানে সংস্কৃতি চর্চা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি। এ থেকে উত্তরণের জন্য ব‌ই পড়তে হবে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পুরস্কৃতদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। পড়াশোনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চায় না থাকলে ছেলেরা করছে কী? পরিবারগুলো কী খোঁজ নিচ্ছে? তাদের আমরা বানাচ্ছি, এগুলো ভেবে দেখা দরকার। জ্ঞান অর্জন করাটাই বড় কথা। সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ প্রয়োজন। সেজন্য পড়তে হবে।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, আলী যাকের বহু পরিচয়ে পরিচিত। তিনি মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অবদান রেখেছেন। তার প্রতিটি কাজে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা ছিল। এটি তার সবচেয়ে বড় গুণ। তাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গৌরবান্বিত। এ জন্যই জাদুঘরের উদ্যোগে তার স্মৃতির উদ্দেশ্য গ্রন্থপাঠের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নয়তো সমাজ যে অধোগতির দিকে যাচ্ছে তা রোধ করা যাবে না। শুধু পাঠ্যপুস্তকে পড়ে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, রক্ষণশীলতার মূল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। 

মফিদুল হক বলেন, তরুণ প্রজন্ম বই বিমুখ হয়ে যাচ্ছে এমন একটি হাহাকার রয়েছে। সেখান থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় অভ্যস্ত করতে চেষ্টা করছি। এরই আলোকে ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রন্থপাঠ ছড়িয়ে দিতে উদ্যাগ বাস্তবায়ন করছে। তরুণদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মশাল ছড়িয়ে দেওয়াই এর লক্ষ্য। এই আলোর মশাল এগিয়ে নিয়ে যাবে তরুণ প্রজন্ম।
 
সারা যাকের বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব এর সময়েও কেউ কেউ ব‌ই পড়ছে। এজন্য পরিবারের উৎসাহ সবচেয়ে বড়। পরিবারের উৎসাহ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। 

মিনার মনসুর বলেন, শিশু কিশোরদের মধ্যে বই পড়ার আকুলতা আছে। কিন্তু তার পরিবার যে কোনো কারণে সেই (বই) যোগান দিচ্ছে না বা উদ্বুদ্ধ করছে না। এ ব্যাপারে পরিবার থেকেই উদ্যোগী হতে হবে। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীর দনিয়া পাঠাগারের মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজকে প্রধান করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে তৃতীয়বারের মতো ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ’ পরিচালিত হয়। এ উদ্যোগে সহায়তা করেছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন। তিন মাসব্যাপী এ বইপাঠ কর্মসূচির সূচনা হয় গত নভেম্বরে। প্রতিটি গ্রন্থাগারে নির্বাচিত তিনটি বইয়ের পাঁচটি করে সেট দেওয়া হয়। নির্বাচিত গ্রন্থসমূহ হলো স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আহসান হাবীব রচিত ‘৭১ এর রোজনামচা’, কলেজ পর্যায়ে শেখ তাসলিমা মুন রচিত ‘আমি একটি বাজ পাখিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কথাসাহিত্যিক মাহমদুল হক রচিত 'জীবন আমার বোন’। 

ঢাকা মহানগর ও কয়েকটি জেলার ৫০টি পাঠাগার এবার কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পাঠ শেষে ৪৬টি পাঠাগার পাঠ-প্রতিক্রিয়া জমা দেয়। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ২২৬টি, কলেজ পর্যায়ে ১৬৩টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৫৯টিসহ মোট ৫৪৮টি পাঠ প্রতিক্রিয়া জমা পড়ে। প্রাপ্তপাঠ প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রাথমিক নির্বাচক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন সমকালের সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, জনকণ্ঠের সাংবাদিক মোরসালিন মিজান ও ভোরের কাগজের সাংবাদিক ঝর্ণা মনি। 

তারা স্কুল পর্যায়ে ৩৭টি, কলেজ পর্যায়ে ৩১টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২৮টি পাঠ প্রতিক্রিয়া জুরি বোর্ডের চূড়ান্ত বিচারের জন্য মনোনিত করেন। জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে শুরুতে প্রমীলা বিশ্বাসের রচিত আছে দুঃখুআছে মৃত্যু এবং আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে কামাল উদ্দিন নিরু রচিত কুনঠে যাও বাহে কবিতা পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে পাঠাগারের শিক্ষার্থীরা। 
 

আরও পড়ুন

×