ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

এমপি আজীম হত্যায় গ্রেপ্তার ফয়সালের আদিনিবাস ভারতে

এমপি আজীম হত্যায় গ্রেপ্তার ফয়সালের আদিনিবাস ভারতে

গ্রেপ্তার ফয়সাল আলী সাজি ও মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক ও ফুলতলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪ | ২১:৪৯ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ | ২২:৩৫

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারুল আজীম আনারের হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া সর্বশেষ গ্রেপ্তার দুই আসামি ফয়সাল আলী ও মোস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। 

জানা যায়, গ্রেপ্তার ফয়সাল আলী সাজির আদিনিবাস ভারতে। আর মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। তারা চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার ছত্রছায়ায় চলাফেরা করতেন। গত বুধবার বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, হত্যার পর জিহাদ হাওলাদারসহ তারা দুইজন এমপি আজীমের দেহ টুকরো টুকরো করার দায়িত্বে ছিলেন।

রোববার খুলনার ফুলতলা উপজেলার আলকা গ্রামে খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্য জানা যায়। এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুলতলার আলকা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া আলাউদ্দিন সাজির বড় ছেলে ফয়সাল আলী সাজি। এক সময় ভ্যানচালক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ট্রাকের হেলপার ও পরে চালক হন। অশিক্ষিত হলেও তিনি শিমুল ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ফুলতলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সাজির বাবা আলাউদ্দিন সাজি বলেন, তার দুই ছেলে অনেক ভদ্র ও ভালো। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কারোর কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভাল হিসেবে জানে। গত মাসে উপজেলা নির্বাচনের সময় থেকে ফয়সালের কোনো খোঁজখবর জানা নেই। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে টেলিভিশনে তার ছবি দেখতে পেয়েছে এমন লোকজন বলাবলি করেছে।

আলাউদ্দিন সাজি পেশায় ডাব বিক্রেতা ও মাঝে মধ্যে ভ্যানও চালান। তিনি বলেন, সাজির দুই সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। ছোট ভাই আসগর আলী সাজি আলকা রোডের ভ্যান চালক। দীর্ঘ দিন তারা ফুলতলা এলাকায় বসবাস করলেও তাদের আদি বাড়ি ভারতে। ছোট বেলায় তার মা মারা যাওয়ায় ছেলেদের আর পড়ালেখা করাতে পারিনি।

এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা সদর ইউনিয়নের যোগিনীপাশা গ্রামের ঈমান আলি ফকিরের ছেলে। ঈমান আলি ফকির অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। বর্তমানে তিনি কৃষিকাজ করেন। তার বড় ভাই মাসুদ ফকির বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করেন। ছোট থেকে কাজকর্ম করতেন না মোস্তাফিজুর। এক রকম ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কবিতা খাতুন বলেন, মোস্তাফিজকে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে দেখিনি। তবে তিন মাস আগে পাসপোর্ট তৈরির করার জন্য তাড়াতাড়ি শুরু করে। তার অনলাইন জন্মনিবন্ধনের জন্য আমার অফিসের আসে।

মোস্তাফিজের মা দোলেনা বেগম বলেন, মোস্তাফিজ নির্দিষ্ট কোনো কাজ করে না। বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করে আর ঘুরে বেড়ায়। গত এক দেড় মাস ধরে বাড়িতে আসে না। লোকমুখে শুনছে তাকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

ফুলতলা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, ফয়সাল আলী সাজি ও মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে তারা ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার একটা অপহরণ মামলার আসামি। 

ডিবির ভাষ্য অনুযায়ী, আক্তারুজ্জামান শাহীন কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আজীম হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ১০ মে ঢাকায় চলে আসেন। ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে খুন হন আজীম। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ভারত ও নেপাল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও রয়েছে তার। ফলে তাকে বাংলাদেশে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। এমপি আজীম ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওই দিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এমপি আজীমের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আরও পড়ুন

×