এমপি আজীম হত্যা
এমপি আজীম হত্যা শাহীনের নির্দেশে আলামত নষ্ট করে ফায়সাল-মোস্তাফিজুর

আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি
সমকাল ও আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ২২:২৯
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার পর কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনের বিইউ ৬৫ নম্বর কক্ষ থেকে সব আলামত নষ্ট করে মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী। এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের নির্দেশনায় তারা এই কাজ করে। হত্যাকাণ্ডের পর অন্যরা দেশে ফিরলেও তারা সবার শেষে ১৮ মে দেশে ফিরে আসে। ফ্ল্যাটে এমপি আজীমের চুল থেকে শুরু করে যেন রক্তের দাগও না থাকে, সেজন্য পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
সর্বশেষ গ্রেপ্তার দুই আসামি মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দেশের বাইরে থেকে ভিডিও বার্তায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন আর রশীদ বলেন, কলকাতায় যাওয়ার জন্য শাহীনের পিএস পিন্টু মোস্তাফিজুর ও ফয়সালের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দেন। ফয়সালকে হৃদরোগ ও মোস্তাফিজকে কিডনি রোগী দেখিয়ে মেডিকেল ভিসা নেন। পরে ট্রেনে কলকাতায় যেতে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কলকাতায় গিয়ে প্রথমে হোটেল ও পরে সঞ্জিভা গার্ডেনে যায় তারা। ১৩ মে এমপি আজীম যখন গোপাল বাবুর বাসা থেকে বের হন, তখন ফয়সাল তাঁকে লাল গাড়িতে করে সঞ্জিভা গার্ডেনে নিয়ে যায়। চাপাতি, বস্তা, দড়ি ও যে চেয়ারের সঙ্গে তাঁকে বাঁধা হয়েছিল, সেগুলো সবই তারা শাহীনের নির্দেশে নিয়ে আসে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ড শেষে এক এক করে অন্যরা চলে গেলেও তারা দু’জন ওই বাসায় ছিল। সেই সময় শাহীন তাদের নির্দেশ দেন, ফ্ল্যাটে যেন কোনো চুল ও রক্তের দাগও না থাকে, সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে। এর পর ১৯ মে তারা বাংলাদেশে চলে আসে। দেশে এসে তারা শাহীনের রাজধানীর বসুন্ধরার বাসায় থাকে।
তিনি বলেন, আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়, তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় তারা। পরিকল্পনা করে তারা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে গিয়ে পূজা শুরু করে এবং নাম পরিবর্তন করে ফেলে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়ে ১৩ মে খুন হন। ১৭ মে এমপি আজীমের পরিবার যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে নিখোঁজের জিডি করে। এই ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে সাতজনকে বাংলাদেশি পুলিশ ও দু’জনকে ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার তিন আসামির জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা। রিমান্ডে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগ তুলে তারা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
এই তিনজন হলেন– ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাঈদ ও তানভীর ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হকের আদালতে এ নিয়ে শুনানি শেষে আদালত আবেদনগুলো নথিভুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিরা রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ মর্মে চিকিৎসার আবেদন করেন। কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন আদালত।