ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

১৬ কোটি টাকার গাছ বিক্রি হলেও হতাশ স্টল মালিকরা

চাঁদাবাজি অব্যবস্থাপনায় শেষ জাতীয় বৃক্ষমেলা

লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ বিভিন্ন চক্রের বিরুদ্ধে

চাঁদাবাজি অব্যবস্থাপনায় শেষ জাতীয় বৃক্ষমেলা

ফাইল ছবি

 জাহিদুর রহমান

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ০১:১২

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মেলা মাঠে গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবার ১৬ কোটি টাকার বেশি গাছ বিক্রি হলেও খুশি হতে পারেননি স্টল মালিকরা। মেলায় স্টল বরাদ্দের নামে তারা শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্টল মালিকদের অভিযোগ, মেলা ঘিরে একটি চক্র লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছে। এক নারী উদ্যোক্তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। সব মিলে মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা হতাশ। 

বন বিভাগের আয়োজনে গত ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া জাতীয় বৃক্ষমেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল ১১৮টি। এর মধ্য ৭৫টি ছিল বেসরকারি নার্সারির স্টল। স্টল মালিকদের অভিযোগ, মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য ১০ হাজার টাকা ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। এর পরও পানি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেন ঠিকাদার। এর বাইরেও চাঁদা ও বকশিশ হিসাবে দিতে হয়েছে অনেক টাকা। গ্রিন ল্যান্ড নার্সারির স্বত্বাধিকারী হারুন প্রতি স্টল থেকে চাঁদা তুলেছেন। বকশিশের নামে স্টলপ্রতি নেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে কোরবানির ঈদেও প্রতি স্টল থেকে এক দফা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা প্রতি স্টল থেকে চাঁদা তোলেন। এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এক নার্সারি মালিক বলেন, এবার টাইলস ব্যবহারের নামে প্রতিটি স্টল থেকে নতুন করে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। ১১৮টি স্টলের বিপরীতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা হয় মাত্র ১২ লাখ টাকা। বাকি ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকার কোনো হিসাব নেই।

বাংলাদেশ নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল হাকিম মণ্ডল বলেন, বকশিশ ও কোরবানির নামে, ভালো জায়গায় স্টল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বন বিভাগের সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি চক্র চাঁদাবাজি করেছে। এটা ছিল ওপেন সিক্রেট।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশাল নার্সারির স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর। তাঁর দাবি, প্রতিহিংসামূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ নার্সারি সমিতির (বিএনএস) কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে গত ১২ জুলাই শেরেবাংলা থানায় জিডি করেন নারী উদ্যোক্তা শাহানাজ বেগম চৌধুরী। রাধিকা নামে একটি খাবারের প্রতিষ্ঠানের মালিক এই নারী উদ্যোক্তার অভিযোগ, টেন্ডারে অংশ নিয়ে মেলায় ক্যান্টিন পরিচালনা করেছি। কিন্তু ইব্রাহিম এবার টেন্ডারে ক্যান্টিনের কাজ না পেয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানি ও আমার কর্মচারীদের মারধর করেছে। আমাকে বলেছে, আগামীবার মেলায় অংশ নিলে আমার লাশ ফেলে দেবে। তার বিভিন্ন বাধার কারণে এবার আমার ৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিষয়টি আমি বন বিভাগকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমি আতঙ্কে আছি। 

এ বিষয়ে জানতে বিএনএস কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জানা গেছে, চাঁদাবাজির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার তদন্ত শুরু করে বন অধিদপ্তর। এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন বলেন, প্রতিটি স্টলের সামনে টাইলস বসানো হয়েছে। এগুলো স্টল মালিকরা নিজে থেকে করেন। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শাহানাজ বেগমের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন বলেন, তিনি গত ১২ জুলাই মাত্র অভিযোগ দিয়েছেন। ওই দিন সরকরি ছুটি থাকায় এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।  

আরও পড়ুন

×