ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতকে এবার এত সহজে ছাড়া হবে না

এখনও আন্দোলন, ভাঙচুর ও নাশকতার কারণ কী

বিএনপি-জামায়াতকে এবার এত সহজে ছাড়া হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৪ | ২২:৩৪ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ | ২২:৫৪

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে চলমান সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্যের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। মদদ দিয়েছে বিএনপি। ২০১৩-১৪ সালের আগুন সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিচার হয়েছে। কিন্তু তাদের চরিত্র বদলায়নি। এবার বিএনপি-জামায়াতকে এত সহজে ছাড়া হবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চেয়েছে, আদালত সেভাবেই রায় দিয়েছেন। তারপরও এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণ কী? এখনও আন্দোলন, ভাঙচুর ও নাশকতার উদ্দেশ্য কী? তিনি বলেন, অনেকে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়েছে। শেখ হাসিনা কখনও পালায় না।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠকে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস-সহিংসতা, তাণ্ডবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং অসংখ্য মানুষ হতাহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই মতবিনিময় বৈঠকের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে ব্যবসায়ী নেতারা এই সন্ত্রাস-সহিংসতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

কারফিউর সমালোচনা করে তা প্রত্যাহারের জন্য বিএনপির আহ্বানের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শরণার্থী জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে যখন আমি দেশে ফিরে আসি, তখনও দেশে কারফিউ চলেছে। আমাকে ঠেকাতে কারফিউ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই বিএনপিই এখন কারফিউর বিরুদ্ধে কথা বলে!

সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ কারফিউ শিথিল করা হবে।
দেশজুড়ে গত কয়েক দিনের সন্ত্রাস-সহিংসতা ও হামলা-ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল সন্ত্রাস চালানোই হয়নি, রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ডেটা সেন্টারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। নরসিংদী কারাগার ভেঙে কয়েদিদের বের করে অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গাড়ি, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, বিটিআরসি ভবন এবং যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা ও ধানমন্ডি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেটানো হয়েছে। ছাত্রলীগকে সরে যেতে বলেছি। হলে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষগুলো ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির একসঙ্গে হামলা চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা ঢাকায় ঘাপটি মেরে বসেছিল। সুযোগ পেয়েই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। বিএনপি এত অস্ত্র কোথায় পেল–সেটাই আমার প্রশ্ন।   

সরকারপ্রধান বলেন, ১৫ বছর আগে দেশের ভাবমূর্তি কী ছিল? এখন কী অবস্থায় এসেছে? আমরা দেশের উন্নতি করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হয়েছে। অথচ সেই বাংলাদেশ ও উন্নয়ন-অগ্রগতির ওপর বারবার আঘাত এসেছে। 

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এবারের সহিংসতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থাপনায়ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব হামলার উদ্দেশ্য কী? সেটা ব্যবসায়ীদেরও বুঝতে হবে। এসব হামলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। করোনার সময়ও ক্ষতি হয়েছিল। তবে সরকার সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানি বাড়াতে সহযোগিতা দিয়েছে। এবারও দেওয়া হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, তার জন্য যা যা করার দরকার, সরকার সেটাই করবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি দেশটাকে ভালোবাসি। যার কারণে আমার দল করে না–এমন ভালো ব্যবসায়ীদেরও সহযোগিতা করেছি। ব্যবসায়ীদের আমি চিনি। কার কী মতলব, সেটাও জানি। তারপরও আমরা সবাইকে, এমনকি যারা আমাদের দল করে না, তাদেরও ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে আপনাদের ডেকেছি। আপনাদের সহযোগিতা দরকার। যেন আপনাদের মধ্যে হতাশা না আসে, সে জন্যই ডেকেছি। ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে আপনারা সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন। যেসব স্থাপনা আগুনে পুড়ে গেছে, সেগুলো মেরামতের কাজ করছে সরকার। তবে একটু সময় লাগবে। 
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে ব্যবসায়ীরা দেশ পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। প্রতিটি নির্বাচনের আগেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা পেয়েছি। যারা এই নাশকতা-সন্ত্রাস করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবসায়ীদের কথা বলতে হবে।

কলকারখানা খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতা হতে পারে–এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল বলেই পোশাক কারখানা বন্ধ করতে বলেছি। জঙ্গি দমন করাই আমাদের লক্ষ্য। যারা এখনই কারখানা খুলতে চান, আমরা তাদের আটকাব না। তবে দায়-দায়িত্ব তাদের। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব সরকার নেবে না। 

 

আরও পড়ুন

×