ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ছাত্র আন্দোলনে দেশে নিহত অন্তত ৬৫০

ছাত্র আন্দোলনে দেশে নিহত অন্তত ৬৫০

.

 সমকাল ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ০১:১০ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ০৫:২৭

বাংলাদেশে এবারের ছাত্র আন্দোলনে অন্তত ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। বেশির ভাগ মৃত্যু ঘটেছে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের হামলায়। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দমনে তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। 

শুক্রবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকার পতনের পর ৫ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে বিক্ষোভে ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত জুনের মাঝামাঝি সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে জুলাইয়ে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। 

আন্দোলনে সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশু এবং চার সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে– বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, গুম, নির্যাতন, অসদাচরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কঠোর বিধিনিষেধ।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে গত ১৫ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।  প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকা এবং যোগাযোগে বিধিনিষেধের কারণে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। 

প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি সুপারিশ করা হয়, উত্তেজনা প্রশমনকে অগ্রাধিকার দিতে এবং আরও জীবনহানি রোধ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সমুন্নত রাখতে হবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা ও উস্কানিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সুপারিশে বলা হয়, মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ 

করুন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বল প্রয়োগ এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করুন। যে কোনো বিক্ষোভে বিজিবি এবং র‌্যাব মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকুন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে  রূপান্তর নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সমর্থন করুন। 

ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ 
এই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক গতকাল জেনেভা থেকে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের এই যুগসন্ধিক্ষণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংঘাতের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ।  বাংলাদেশের সবাইকে ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশীদার করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন জাতীয় ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া। সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দির মুক্তিকে স্বাগত এবং গুম ও নির্বিচারে আটক সবার মুক্তির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এই সময়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফল রূপান্তরে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাংলাদেশের সব মানুষের অধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে প্রয়োজন মতো সহায়তা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বলেন, সাবেক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেখামাত্র গুলির নির্দেশের জেরে বাংলাদেশে যে নৃশংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে আগামী সপ্তাহে দেশটিতে যাবে জাতিসংঘের একটি দল। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মত কী?

জবাবে ফারহান হক বলেন, এই দলের কাজ কী, তা তাদের দেখতে হবে। এই পর্যায়ে দলটি সম্পর্কে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই। পরে অবশ্য ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও ক্ষমতার পালাবদলের পর জাতিসংঘ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে জবাবদিহির প্রসঙ্গও আছে।

ফারহান হক বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে সহায়তার ক্ষেত্র ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি দল ঢাকা সফরে যাবে। মানবাধিকার সুরক্ষাকে শক্তিশালী করতে সফল উত্তরণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে সমর্থনের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও পড়ুন

×