হাছান মাহমুদের চাপে নেওয়া সেই আবাসন প্রকল্পের ছাড়পত্র বাতিল
পাহাড় ও জলাশয় ধ্বংসের আশঙ্কায় সব সংস্থার আপত্তি ছিল

ছবি-সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ২০:০৩
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ‘সুপারিশে’ নেওয়া জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) ‘সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন’ শীর্ষক আবাসন প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিল করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সোমবার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটির ছাড়পত্র বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মহাপরিচালক অনুমোদন করেন। অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল মো. শামীম স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আবাসন প্রকল্পটির পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি পাঠানো হয়।
এর আগে ১৩ আগস্ট জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ পাহাড় ও জলাশয়বেষ্টিত উল্লেখিত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবকে চিঠি দিয়েছে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য বিজয় কুমার মণ্ডল এ চিঠি দেন। চিঠিতে প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ৯ একর জায়গায় পাহাড়, টিলা ও জলাভূমি ছাড়া সমতল জায়গা নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আধা সরকারি সুপারিশের (ডিও লেটার) পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল। প্রকল্প নেওয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে সাবেক এই মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়েছেন বলে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ। প্রকল্প গ্রহণের সময় হাছান মাহমুদ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ বছরের ৬ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদন করেন। শর্তের মধ্যে ছিল পাহাড়ি ভূমি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা যাবে না। প্রকল্প এলাকার ৭০ শতাংশ পাহাড় ও ৩০ শতাংশ জলাধার হওয়ায় বিভিন্ন সংস্থার আপত্তিতে এই প্রকল্প প্রথমে বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু হাছান মাহমুদের চাপে আগের মতামত বাদ দিয়ে নতুন করে প্রকল্প অনুমোদন করানো হয়। প্রাথমিক কাজও শুরু হয়।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হাছান মাহমুদের চাপে কর্তৃপক্ষ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এ প্রকল্প নেন। সব সংস্থার আপত্তি, এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বাতিল করার পরও প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে তাঁর চাপে। মূলত প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ৩৮ কোটি টাকার বেশির ভাগ হাতিয়ে নিতে ছক করা হয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, ব্যক্তি স্বার্থকে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ দেখিয়ে টিলা কাটার যে অপচেষ্টা তা রুখতেই পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত। এটি সরকারি সংস্থাকে স্পষ্ট বার্তা দিবে যে পাহাড় টিলা কেটে আর উন্নয়ন করা যাবে না।