আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির সাজা
মুক্তির জন্য এক মাসেও নেই আইনি পদক্ষেপ

ফাইল ছবি
কামরুল হাসান জনি, ইউএই
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪ | ০১:২২
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আটকের এক মাস পরও তাদের সঠিক তালিকা পাওয়া যায়নি। সাজার রায় ঘোষণার পর কে কোন কারাগারে আছেন, সে তথ্যও নেই। যে কারণে শুরু হয়নি আইনি লড়াই। এ পরিস্থিতিতে তাদের মুক্তি কীভাবে মিলবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে মুক্তির জন্য কূটনৈতিকভাবে উপায় বের করার কথা বলছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নিলে বিষয়টির সহজ সমাধান আসতে পারে।
ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই আমিরাতের কয়েকটি সড়কে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ ঘটনার পর ২০ জুলাই বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়। দেশটিতে দাঙ্গা ও অশান্তি সৃষ্টি, জনসাধারণের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন, ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে শেয়ার করায় ১৯৮৭ এর (দণ্ডবিধি) ফেডারেল ল নম্বর ৩ এর ১৭৮ ধারায় ৫৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২২ জুলাই তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং ৫৩ জনকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত প্রবাসীদের মুক্তির বিষয়ে আইনগত সহায়তা দিতে আমিরাতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন ওলোরা
আফরিন নামে এক বাংলাদেশি আইনজীবী। সাজাপ্রাপ্তরা ছাড়াও কিছু প্রবাসী আটক হয়েছেন উল্লেখ করে এ সময় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বেশি জরুরি বলছেন তিনি।
ওলোরা আফরিন বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জনের সঠিক তালিকা এখনও মেলেনি। যে কারণে আইনি লড়াইও শুরু করা হয়নি। এ ছাড়া মামলা পরিচালনার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হয়। কিন্তু সাজাপ্রাপ্তরা কে কোন কারাগারে আছেন, সেই তথ্যের অভাবে পুরো প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে তাদের জন্য আপিলে জনপ্রতি খরচ হতে পারে প্রায় ৩ হাজার দিরহাম। এত টাকার দায়িত্ব কে নেবে?
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আটক ২৮ প্রবাসীর তালিকা পেয়েছি। এটি আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিষয়েও লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ ছাড়া অভিযুক্তদের ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, আপিল-সংক্রান্ত অজ্ঞতা ও আপিলের জন্য তহবিলের বিষয়টি তুলে ধরেছি।
এদিকে ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘আমিরাতে দণ্ডিত বাংলাদেশি কর্মীদের মুক্তির জন্য দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা কথা দিয়েছেন, আজকালের মধ্যে তিনি আমিরাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন।’
ওলোরা আফরিন ও দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নিলেই কেবল এ সমস্যার সহজ সমাধান আসতে পারে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীদের আশার আলো দেখাতে পারে।
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন জানান, ২২ জুলাই দূতাবাসের পক্ষ থেকে আটক ৫৭ প্রবাসীর তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় এ তথ্য দেয়নি আমিরাতের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
সম্প্রতি আমিরাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আবু জাফর গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে দূতাবাস চাইলেও আদালতে যেতে পারবে না।
- বিষয় :
- কোটা আন্দোলন