প্রশ্ন তুললেই ছাত্রলীগ, গোয়েন্দা চলে আসত: আনু মুহাম্মদ

ছবি: সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:০১
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সার্বক্ষণিক একটা নজরদারি ছিল- কেউ কোনো প্রশ্ন তুললেই ছাত্রলীগ চলে আসত, গোয়েন্দা চলে আসত। কিংবা পুলিশ বা অন্য কোনো উইং এসে হুমকি দিচ্ছে, ক্রসফায়ারের হুমকি দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ছিল।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবন পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’- শীর্ষক বইয়ের আলোচনায় আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে অনন্যা প্রকাশন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দেশব্যাপী আওয়াজ উঠার পর আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রকল্পের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল- পরিচালনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরিচালনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানে হলো কেউ এটা নিয়ে কথা বলতে পারবে না। এমনিতে সমস্ত প্রকল্পে অনিয়মের শেষ ছিল না, তারমধ্যে ছিল ভয় দেখানো।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আর তো কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার ছিল। সেজন্য তাদের অনেককে খুশি রাখতে হয়েছে। এরমধ্যে তারা ইফিশিয়েন্টলি আর্মিকে ১৫ বছর খুশি রাখার কাজটি করেছে। না হলে তো ১৫ বছর থাকার কথা না।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য যা করেছে তারা সেগুলোর জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে না। বুরোক্রেসি বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু একটি নতজানু, একটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সেখানে আর্মিকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য সমস্ত কনস্ট্রাকশন, একে তো একশত টাকার কাজ এক-পাঁচ হাজার টাকায় হত, সে কাজগুলোতে আর্মিকে যুক্ত করা হত।
আনু মুহাম্মদ বলেন, যতই জনগণ আন্দোলন করুক, প্রাণ দিক। এটা ৬৯, ৯০ এবং ২৪ গণঅভ্যুত্থানে তিনটা ক্ষেত্রে দেখেছি, যতই প্রাণ যাক আর্মি যতক্ষণ সঙ্গে আছে সরকার মনে করে সে টিকে যাচ্ছে। এরশাদের সময় জরুরি অবস্থা দিয়ে টিকে গেল। আইয়ুব খানের সময়েও আমরা তা দেখেছি। ফলে এটা একটা প্রতিষ্ঠান, অনেক পরিবর্তনের নির্ধারক হিসেবে কাজ করে।
২৪’এর ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের কোনো প্রস্তুতি ছিল না মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল না। এটা কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল। অনেক কষ্ট করে, অনেক পরিশ্রম করে শেখ হাসিনা নিজের পতন ডেকে এনেছেন। এত কম সময়ে এত নৃশংসভাবে নিহত মুক্তিযুদ্ধের পরে আর হয়নি। ইতিহাসেও কম পাওয়া যাবে। এমন অবস্থা করলেন সকল মানুষ এতে শামিল হলেন। একপর্যায়ে বলল শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তার পতন হলো। এরপর কী হবে সেটা বড় ধরনের সমস্যা।
আনু মুহাম্মদ বলেন, এখানে গণতন্ত্র আসলে পাহাড়ে কিন্তু গণতন্ত্র আসবে না। একই রকম সামরিক শাসন থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমাধান করতে হবে। সমতল ও পাহাড়ের বৈষম্য একটি আলোচনার মধ্যে আসতে হবে সমাধানের জন্য। কয়েকদিন আগেও অশান্তি হয়েছে সেখানে। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় বৈষম্য। অন্য ধর্মীয় যারা আছে তারা কেন নিরাপত্তাহীনবোধ করবে, এর থেকে মুক্তির জায়গা এ সরকারের বড় দায়িত্ব। এখন পর্যন্ত চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, এখন নারী পুরুষ লিঙ্গিয় বৈষম্য- গণতান্ত্রিক পরিবেশে একজনের পরিচয় কী পোশাক পরলো তার ধর্ম জাতিগত বিশ্বাসের কারণে যদি আক্রমণ হয় তাহলে আরেকটা ফ্যাসিবাদের লক্ষ্মণ। এক ফ্যাসিবাদ থেকে অনেকগুলো ফ্যাসিবাদের হাতে পড়ি তাহলে তো হবে না। মেয়েদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। শ্রেণি,জাতি, লিঙ্গ এবং ধর্মীয় বৈষম্য দূরীকরণে বড় ধরনের আলোচনায় যেতে হবে। এবং সেটার জন্য রূপকল্প আনতে হবে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম, বইটির লেখক আমীর খসরু প্রমুখ।
- বিষয় :
- ছাত্রলীগ
- গোয়েন্দা সংস্থা