মালদ্বীপ-কাতারের সঙ্গে হচ্ছে বন্দিবিনিময় চুক্তি

কোলাজ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৩৪ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:১৪
মালদ্বীপ ও কাতারের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দুই দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি করতে সরকার খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
উপদেষ্টা পরিষদ সূত্র জানায়, মালদ্বীপের কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সে দেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভগের এই প্রস্তাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন দেশে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিজ দেশে সাজা ভোগ করার সুযোগ প্রদানের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি সম্পাদন করা হয়ে থাকে। ওই চুক্তির আওতায় চুক্তিবদ্ধ দেশে বিভিন্ন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ দেশে সাজা ভোগ করার সুবিধাপ্রাপ্ত হন।
২০১৫ সালে মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের সম্মতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই চুক্তি প্রণয়ন করা হয়।
মালদ্বীপে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়, দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপের বিভিন্ন কারাগারে বাংলাদেশি নাগরিকরা নানা অভিযোগে আটক রয়েছেন এবং কারাবন্দিরা তাদের অবশিষ্ট সাজার মেয়াদ বাংলাদেশের কারাগারে ভোগ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। প্রস্তাবিত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে মালদ্বীপের কারাগারে আটক বাংলাদেশি সাজাপ্রাপ্ত নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে সাজা ভোগ করতে পারবেন। এই চুক্তি ১০ বছরের জন্য বজায় থাকবে। উভয় পক্ষ সম্মত হলে আরও ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।
গতকালের বৈঠকে কাতারের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তির খসড়া ও চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর আওতায় চুক্তিবদ্ধ দেশে বিভিন্ন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ দেশে সামাজিক পুনর্বাসনের সুবিধাপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এমন চুক্তি রয়েছে।
২০২২ সালের ১৭ আগস্ট কাতার সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে প্রস্তাবিত এই খসড়া চুক্তি সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠায়। ওই খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে একই বছরের ২৪ আগস্ট সুরক্ষা সেবা বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে উভয় দেশের সম্মতিতে চুক্তি প্রণয়ন করা হয়। গত ২৩ এপ্রিল কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফরকালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ১৮টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে সাজা ভোগ করতে পারবেন। এ চুক্তিটি এক বছরের জন্য বলবৎ থাকবে।
এ ছাড়া বৈঠকে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত সংশোধিত অধ্যাদেশে নতুন তিনটি ধারা ও একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার যে কোনো ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ ও নিয়োগ এবং ওয়াসা বোর্ড বাতিল করতে পারবে।
একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ‘রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭’-এর খসড়ার অনুমোদন করা হয়। এবারের রপ্তানি নীতিতে খাতভিত্তিক কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। ওষুধ শিল্প ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এবং হস্তশিল্পজাত পণ্যকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা খাতের রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নতুন একটি অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি এবং রপ্তানি-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি সন্নিবেশ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাল বিএনপির সংলাপ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, তৃতীয় দফার রাজনৈতিক আলোচনার প্রথম দিন বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ শুরু হচ্ছে। ওই দিন আড়াইটার সময় প্রথম আলাপ শুরু হবে। বিএনপির পর আরও প্রধান কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে। দলগুলোর সঙ্গে এসব বৈঠক এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলবে।
ডিসি নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রতিবেদনের সত্যতা কতটুকু? আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। রিপোর্ট ঠিক ছিল কিনা, যে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
শফিকুল আলম বলেন, আমরা আশা করব, পত্রিকাগুলো তাদের নিউজ উপস্থাপনে কোনোরকম অপতথ্য ছড়াবে না। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হবে। এই কমিটিতে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিককে যুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পোশাক কারখানায় অনেক বিক্ষোভ হচ্ছে। আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। শ্রমিক ভাইবোনদের বিক্ষোভের বিষয়ে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। সামনে ভালো কিছু পদক্ষেপ দেখবেন।
প্রেস সচিব বলেন, পাঁচ সংস্কার কমিশন মোটামুটি চূড়ান্ত। এখন শুধু ঘোষণার বাকি। একটা কমিশনের দু-একজনের নাম বাকি আছে। আশা করছি, এক থেকে দু’দিনের মধ্যে সেটাও চূড়ান্ত হবে।
- বিষয় :
- চুক্তি
- বন্দিবিনিময়
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়