আবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, এবার পাবেন সম্মানীও
ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪– এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:৩৫
রাজধানীর সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে, পরে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এ কাজের জন্য তাদের সম্মানী দেওয়া হবে।
সোমবার এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪– এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ট্রাফিক পক্ষে এবার আমাদের সঙ্গে ছাত্র ভাইয়েরা যোগ দিয়েছেন। তাদের আমরা একটা গ্রহণযোগ্য সম্মানী দেব। আপনারা দেখেছেন, ৫ আগস্টের পর তারা রাস্তায় ভালো কাজ করেছেন। এখন আমাদের সঙ্গে কাজ করে তারা হয়তো রাস্তার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত করতে পারবেন।
উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনভোগান্তি অনেক কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পক্ষের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কীভাবে কোথায় তাদের কাজে লাগানো হবে তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রোভার স্কাউট সদস্যরা এরইমধ্যে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঢাকায় জনবসতির ঘনত্ব অত্যাধিক। বর্তমানে দুই কোটিরও বেশি মানুষ এই শহরে বাস করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা এবং আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। পাশাপাশি একই সড়কে রিকশা, ঠেলাগাড়িসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক বাহনও চলে। ফলে ঢাকায় সুশৃঙ্খল ও কাঠামোবদ্ধ ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনতর হচ্ছে। অপরদিকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন দাবি–দাওয়ার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা, সুশীল সমাজের ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ তাদের কায়িক শ্রম ও মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। ট্রাফিক সিগন্যাল দেশীয় প্রযুক্তিতে ব্যবহারের মাধ্যমে চালু করার জন্য একটি গবেষক দল কাজ করছে। এছাড়াও সরকারি–বেসরকারি সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। শুধু সরকার বা পুলিশের পক্ষে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নগরে বসবাসকারী সবার অংশগ্রহণ। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন গাড়িচালক এবং ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নগরবাসীকেও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশ একরকম প্রশাসনবিহীন ছিল। সে সময় আপনারা দেখেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্ররা কীভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারুণ্যের শক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকার কাজে লাগাতে চায়। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরেক বিশেষ অতিথি প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ বলেন, মানুষ চায় পরিবর্তন, মানুষ চায় সেবা। গতানুগতিক যে সেবা পেয়ে আসছে ট্রাফিকের কাছ থেকে তারা এর পরিবর্তন চায়। মানুষ নিরাপদ সড়ক ও যানজটমুক্ত শহর চায়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, পুলিশ রাত-দিন পরিশ্রম করে যান চলাচলকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় এই সমস্যা সমাধানে একদিকে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা, কার্যকরী উদ্যোগ এবং অন্যদিকে সকল নগরবাসীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা, সচেতনতা ও সতর্কতা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম।