ভাতা পাঠাতে নতুন নিয়ম চালুর চিন্তা সরকারের

লোগো
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:০৩
স্বল্পতম সময়ে সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দিতে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তবে উপবৃত্তি ও ভাতা বিতরণে গ্রাহকের পছন্দ এবং সুবিধা প্রাধান্য না দিয়ে একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে সিংহভাগ অর্থ বিতরণের কাজ দেয় গত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ওই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করছে।
এ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সরকারের আমলে প্রায় সব সরকারি শিক্ষা উপবৃত্তি ও সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বিতরণের কাজ পায় নগদ। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর সবাইকে এবং মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যায়ের ৬৪ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকাংশের উপবৃত্তি বিতরণে নিয়োজিত আছে প্রতিষ্ঠানটি। উপকারভোগীর পছন্দ অনুযায়ী মোবাইল অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি গ্রহণ করার আদর্শ পদ্ধতিকে বাতিল করে এবং কোনো রকম দরপত্র বা পদ্ধতিগত ধাপ অনুসরণ না করেই নগদকে এ সুবিধা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত করেছে এবং প্রশাসক নিয়োগ করেছে। নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নগদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনা নির্ধারণে একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের (নগদ লিমিটেড) মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে আরজেএসসিকে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। নগদের কার্যক্রমে অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ‘ফরেনসিক’ নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নগদের সঙ্গে ২০২২ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে উপবৃত্তি বিতরণে চুক্তি হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অন্যান্য মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী এফএমএস প্রতিষ্ঠান বাছাই করার নিয়ম চালুর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ ২৭ ধরনের ভাতা আগের নিয়মে এখনও নগদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নার্গিস খানম সমকালকে বলেন, তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে উপকারভোগীরা সঠিকভাবে যেন টাকা পায়। সম্প্রতি তাঁকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও বৈধ অভিভাবকের পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট যে কোনো সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করার জন্য একটি নির্দেশিকা জারি হয়। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরের নগদের সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণে চুক্তি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সুপারিশে প্রাথমিকের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি বিতরণের কাজ দেওয়া হয় নগদকে। ২০২০ সাল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ সব উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় অভিভাবকদের পছন্দের মোবাইলে আর্থিক সেবা অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি দেওয়া হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উপকারভোগী এবং তাদের অভিভাবকদের মতামত উপেক্ষা করে নগদকে এককভাবে উপবৃত্তি বিতরণের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতার ৭৫ শতাংশ এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকার থেকে ব্যক্তি (জি-টু-পি) পদ্ধতিতে ৪০টি জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী ভাতা পেয়ে আসছেন নগদের মাধ্যমে। বাকি ২৪টি জেলার উপকারভোগীরা ভাতা পাচ্ছেন অন্যান্য এমএফএস, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। ভাতাভোগীর বড় অংশ যখন থেকে একক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতা গ্রহণ করা শুরু করে, তখন থেকে অনেকেই নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।