নাশকতার পেছনে কারা

.
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৪ | ০৩:৫৭
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু থেকে দুই সপ্তাহ ছিল শান্তিপূর্ণ। এর পর শুরু হয় সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। গত তিন দিনে তা ভয়াবহ নাশকতার দিকে মোড় নেয়। রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পোড়ানো হয় একাধিক ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ি, হামলা চালানো হয় অন্তত দুটি থানায়। মেট্রোরেল স্টেশনেও হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এই তাণ্ডবের পেছনে কারা? কারা বেছে বেছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর করছে? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে কারা? তাদের উদ্দেশ্য কী?
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলন এখন আর শিক্ষার্থীদের হাতে নেই। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে পড়েছে। তারাই এসব নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
গত ১ জুলাই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে কোটা সংস্কারের সময়সীমা বেঁধে দেন তারা। যদিও প্রতিদিনই তাদের নানা কর্মসূচি চলতে থাকে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই তাদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ।
তবে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হলে পরদিন বদলে যায় ঘটনাপ্রবাহ। শিক্ষার্থীরা পাল্টা আক্রমণ করলে পরিস্থিতি সংঘাতময় ও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। এর মধ্যে গত বুধবার থেকে শুরু হয় নাশকতামূলক কার্যক্রম। ওই দিন যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয় যাত্রাবাড়ী থানায়। পরদিন রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মহাখালীতে রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়। এদিন মিরপুর, মহাখালী, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় পুলিশ বক্সেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। উত্তরা পূর্ব থানায়ও হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবারও নাশকতার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এদিন মহাখালীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরোনো ভবনে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় গ্রিন রোডের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ভবন। মেট্রোরেলের মিরপুর ও কাজীপাড়া স্টেশন ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক স্থাপনায় হামলা চালায় তারা।
একের পর এক এমন নাশকতার ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, এসবের নেপথ্যে আসলে কারা? গতকাল রামপুরা, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী নন। তাদের একটি বড় অংশ মধ্যবয়সী। আরেক অংশ শিশু-কিশোর, যারা অনেকে পথশিশু বা ‘টোকাই’ হিসেবে পরিচিত। কথা বলতে চাইলে তাদের কয়েকজন এলোমেলো উত্তর দেয়। তারা নিজেদের পরিচয় জানাতে অস্বীকার করে, এমনকি কেন এই আন্দোলন তাও তারা বলতে পারেনি। ‘ভাঙচুর করছেন কেন’– এমন প্রশ্ন শুনে তারা ক্ষেপে যায়।
সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী সমকালকে বলেন, ‘কোটাবিরোধীরা এসব হামলা চালাচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য এটা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপব্যাখ্যা দিয়ে, বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝায় একটি চক্র। এ সুযোগে শুরু হয় নাশকতা।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার উদ্দেশ্য কী ছিল? একই উদ্দেশ্যে সেই অপশক্তি এখনকার নাশকতা করছে। কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি তাদের পছন্দ নয়। এ কারণে মেট্রোরেলের মতো স্থাপনায় হামলা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে ছদ্মবেশে তারা এসব করছে।’
- বিষয় :
- নাশকতা