ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

হিন্দু নারীকে মারধরের ভিডিওটি ২০২২ সালের: রিউমার স্ক্যানার

হিন্দু নারীকে মারধরের ভিডিওটি ২০২২ সালের: রিউমার স্ক্যানার

ছবি: রিউমার স্ক্যানার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:০৮ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৩২

দু’জন পুরুষ তিন নারীকে মারধর করছেন- সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হয়, ‘উগ্র মুসলিম পুরুষ কর্তৃক প্রকাশ্যে হিন্দু নারী হত্যাচেষ্টা’র ভিডিও এটি।’ তবে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমার স্ক্যানার বলছে, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। এটি ২০২২ সালে জাম পাড়া এবং জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সংঘটিত একটি মারধরের ঘটনার সময়ের ভিডিও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়, এটি ২০২২ সালের। একটি গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে ওই বছরের ৩ জুন ‘জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাছ থেকে জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনাটি ঘটেছে।

আরেক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে রিউমার স্ক্যানার জানায়, ২০২২ বছরের ২ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জোড়বটতল এলাকায় জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে তিন নারীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আহত তিনজন হলেন যোগেন্দ্র চন্দ্র দাসের স্ত্রী শ্রীমতি রানী দাস (৩০), মিলন চন্দ্র দাসের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দাস (৩২) ও কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের স্ত্রী রীমা রানী দাস (২৭)। হামলাকারীরা হলেন- তৌহিদুল ইসলাম ও আলমগীর। এ ঘটনায় সেসময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। 

রিউমার স্ক্যানার জানায়, ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর ওই বছরের ৫ জুন জনি চৌধুরী নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া গেছে। ওই পোস্টে আলোচিত সেই দাস বাড়ির এক সদস্য তপন দাসের বরাতে জানান, তারা চার ভাই দীর্ঘদিন ওমানে প্রবাস জীবন অতিবাহিত করছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে তার ইনবক্সের বক্তব্য তুলে ধরা হলো- 

‘ওরা আমাদের এলাকায় জায়গা কিনেছে মনে হয় ৫ শতক। কিন্তু জাল কবলা বানিয়ে জায়গা দখল করে আছে ৫০ শতকের মতো। এমনকি উনি যে জায়গায় বাড়ি করছে ওটাও হিন্দুদের দখল করা জায়গা। অধিকাংশ জায়গা নিয়ে কোর্ট এ মামলা চলমান। যে জায়গায় আমাদের মেরেছে ওটা আমার বাবার নামে ক্রয়কৃত। যদিও ওটা নিয়ে মামলা আছে কোর্টে। মামলা চলছে আরেক প্রতিবেশীর সঙ্গে। কিন্তু ওরা চায় দখল করে নিতে। যদিও তাদের কোনো কাগজ দলিল কিছুই নেই। কবলা এবং নামজারি সব আমাদের নামে। আমরা কিছু বলতে গেলেই দেশ থেকে বিতাড়িত করার হুমকি, আর অত্যাচার করে। এভাবে অনেকবার হামলা করেছে।’

এছাড়াও ওই বছরের ৪ জুন সুমন দাস নামের অপর একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ঘটনার বিষয়ে প্রচারিত পোস্টে বলা হয়, ‘কেবল জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে গতকালের এই বর্বরোচিত, রক্তক্ষয়ী হামলা হয়নি। প্রতিবেশী আমানুল হক এবং তার দুই পুত্র আলমগীর (বড় ছেলে), তৌহিদ (ছোট ছেলে) পেশিশক্তি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এই পরিবারটিকে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সর্বশেষ গতকাল ভূমিদস্যু আলমগীর ও তৌহিদুল শ্লীলতাহানি করে খুব ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করে রক্তাক্ত করেছে এই অসহায় ৩/৪ নারীকে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদী হাজি আমিনুল হক সওদাগর। বিবাদীরা হলেন- সচী রানী দাস,স্বামী অমৃত দাশ, শ্রীমতি দাশ, স্বামী যোগন্দ দাস, অঞ্জনা দাস স্বামী চন্দ্র দাস, রিনা দাস, স্বামী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস।

অভিযোগে বলা হয়, বিবাদীদের সঙ্গে আমার বহুদিন ধরে জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিবাদীরা আমার সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছেন। আমি বাঁধা দিলে তারা আমার ও আমার পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতন করিতে শুরু করে। তুচ্ছ বিষয়ে কেন্দ্র তারা গালিগালাজ এবং মারধর করে। স্থানীয় এবং মেম্বারকে বিষয়টি জানালে তারা বিবাদীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে এবং সম্পূর্ণ জায়গা অনেকবার পরিমাপ করে। কিন্তু তারা কোনো কিছুই মানতে রাজি না এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে। তাই আমি ২০১৭ সালের ৯ মার্চ এবং পরে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ করি।

এতে আরও বলা হয়, তারপরও তারা শান্ত হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করি। রায়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেন- ওই জায়গায় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। কিন্তু বিবাদীরা তারপরও আমার জমি দখলের চেষ্টা করছে।  পরে আমি নিষেধাজ্ঞা অবমাননা মূলে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ করি। বিবাদীরা বিষয়টি জানতে পেরে ২০২২ সালের ৬ জুন আমার জাম গাছ থেকে জাম পাড়াকে কেন্দ্র করে আমার ২ ছেলের ওপর লোহার রড দিয়ে হামলা করে। ওই ঘটনায় আমার বড় ছেলের মাথা ফেটে যায় ও ছোট ছেলের ডান হাতে গুরুত্বর জখম হয়।

অর্থাৎ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, জাম পাড়া এবং জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকে সৃষ্ট মারধরের ঘটনা এটি, যা ২০২২ সালে বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং ২০২২ সালের পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম পুরুষ কর্তৃক হিন্দু নারীর ওপর হামলার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

আরও পড়ুন

×