ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নতুন করে তদন্ত হওয়া উচিত, পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নতুন করে তদন্ত হওয়া উচিত, পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৫ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৭:০১

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত দুটি মামলার তদন্ত নতুন করে হওয়া উচিত বলে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে মামলা দুটি তদন্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রায়ের অনুলিপি পাঠাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলকারী, যারা কারাগারে আছেন, তাদের অন্য মামলা না থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতেও রায়ে বলা হয়েছে।

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল করে গত ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এতে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ আসামিকেই খালাস দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিচারপতিদের সই শেষে ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। 

এদিকে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল হওয়ার পর মামলাটি পুনর্তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। তখন আইনজ্ঞরা জানান, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। 

দুই দশক আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও দলটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত।

রায়ে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন। আর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জনই জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন দণ্ডিতরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন-সংক্রান্ত ডেথ রেফারেন্স আবেদন জমা দেয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাইকোর্টে নতুন করে এ দুই মামলার শুনানি শুরু হয়। এর পর ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও খালাসের কারণ

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিচার শুরু হয়েছিল, সেটিই ‘অবৈধ’। এ ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে করায় সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। এর চেয়ে বড় কথা, তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ২৫ সাক্ষীর কেউই বলেননি, কে গ্রেনেড ছুড়েছি বা কেউ ছুড়তে দেখেছেন কিনা। ফলে প্রকৃত খুনি কে, সেটির প্রমাণ নেই। শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন

×