ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

করোনাকাল শেষ হলেই ষোড়শ সংশোধনীর শুনানী: সংসদে আইনমন্ত্রী

করোনাকাল শেষ হলেই ষোড়শ সংশোধনীর শুনানী: সংসদে আইনমন্ত্রী

অ্যাডভোকেট আনিসুল হক- ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০ | ০৮:৫৫

করোনাকাল পার হলেই বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ পিটিশনের শুনানী শুরু হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর আনা ছাঁটাই পস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক (চুন্ন) ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে ষোড়শ সংশোধনীর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই সংসদে সংবিধান সংশোধন হয়েছিল। সেই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছিল। তারপর আপিল করা হয়েছিল কী না? করা হলে তার কী অবস্থা? তিনি এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে ববস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রিভিউ পিটিশন হিসেবে আপিল বিভাগে রয়েছে। যখনই করোনা ভাইরাস আমাদেরকে ছেড়ে যাবে তখনই শুনানী শুরু করা হবে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এরপর ২০১৫ সালের ৫ মে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আপিল করে এবং শুনানি শেষে ওই বছর ৩ জুলাই আপিল খারিজ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ পিটিশন করে।

এর আগে ছাঁটাই পস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির এমপি হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়। সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে- বিচার বিভাগকে স্বাধীন করবে কি-না। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। বিচার বিভাগ এখনও নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ। বিচার বিভাগ, উচ্চ আদালতে বিভিন্ন নির্দেশে বিচারকার্য পরিচালিত হচ্ছে। এটি সত্যিকার অর্থে ন্যায় বিচারের অন্তরায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা যায়নি।

তিনি বলেন, সারাদেশে চিহ্নিত মাদক সম্রাট, চিহ্নিত মাদক পাচারকারী, চিহ্নিত সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীরা বিচারের আওতায় বাইরে। বিচার ব্যবস্থার দুরবস্থা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় ঘুরছে।

আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকারি দলের বিপক্ষে রায় দেওয়ায় অনেক অধঃস্তন বিচারককে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন  করতে স্বাধীনতার পূর্বে যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। সেই হিসেবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই সময় সরকারি দলের এমপিরা হৈ চৈ শুরু করলে বিএনপির হারুন আরও জোর দিয়ে বলেন, হ্যাঁ পাকিস্তান আমলে। স্বাধীনতার আগের কথা বলছেন তিনি।

এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি এমপির আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। তিনি শুধু পাকিস্তান যেতে চান না। সব কিছু নিয়ে পাকিস্তান যেতে চান। সেখানে যাব না। সেখানে ন্যায়বিচার ছিল না। আমরা ন্যায় বিচার দিয়েছি।

আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা শেষ করেছে। এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

এর আগে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান তার ছাঁটাই প্রস্তাবের বক্তব্যে বিচার বিভাগের বিষয়ে স্বাধীনতার পুর্বের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপির হারুনের প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। যাদের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাদের বিচারে পরিচালিত হতে চাই না। পাকিস্তানী বিচার চাই না। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের বিচার ব্যবস্থায় পরিচালিত হতে চাই।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এদেশে বিচার বন্ধ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

×