ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির ৭০ শতাংশ কম বয়সী

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির ৭০ শতাংশ কম বয়সী

.

তবিবুর রহমান, ঢাকা ও শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫ | ০১:১২ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ | ০৮:৫৫

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ কম বয়সী। আগে পাঁচজনে একজন হলেও, এখন চারজনে একজন রোগটিতে ভুগছেন। ৫৫ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে স্ট্রোক, ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ‘মৃত্যুঝুঁকি’ বাড়ছে।

চট্টগ্রামের দুটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত এক বছরে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫) চিকিৎসা নিতে আসা আড়াই হাজারের বেশি রোগীর ওপর সমীক্ষায় এসব তথ্য পেয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা দেখেছেন, শহরের চেয়ে গ্রামে আক্রান্ত বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ। আক্রান্তদের অধিকাংশ জানেন না তিনি রোগটি বহন করছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে, বাংলাদেশে অনুমিত উচ্চ রক্তচাপের রোগী প্রায় ২ কোটি, যাদের বয়স ৩০ থেকে ৭৯ বছর। এসব রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশ শনাক্তের বাইরে। গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন, ডব্লিউএইচওর ২০২৩ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তদের মধ্যে চিকিৎসা নেন মাত্র ৩৮ শতাংশ; নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ১৫ শতাংশ। বাকি ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।

এমন বাস্তবতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ শনিবার বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য– ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়, ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগজনিত কারণে, যার মধ্যে ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। পঙ্গুত্বের প্রধান তিন কারণেরও একটি উচ্চ রক্তচাপ।

চট্টগ্রামের তিন হাসপাতালের সমীক্ষায় বলা হয়, চিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ পাওয়া গেছে, যারা আগে থেকে আক্রান্ত। কিন্তু নিজেরা জানতেন না। আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের বয়স ২২ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। প্রতিদিন ৫ গ্রাম লবণ শরীরে সহনীয় মাত্রা হলেও, আক্রান্তরা গ্রহণ করেছেন কয়েক গুণ বেশি।

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক, ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। সমীক্ষায় আমরা এর সত্যতা পেয়েছি। সবচেয়ে উদ্বেগের, আক্রান্তদের বড় অংশ কম বয়সী। যদিও এটিকে বড়দের রোগ বলা হয়।’

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘রোগী বাড়লেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। গ্রামে আক্রান্ত বাড়লেও, তাদের জানাশোনার ঘাটতি স্পষ্ট।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘বাইরের খাবার থেকে বেশি লবণ শরীরে ঢুকছে। অতিরিক্ত চর্বি ও তেলজাতীয় খাবার গ্রহণ এবং স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির অন্যতম কারণ। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাসে একবার রক্তচাপ মাপা উচিত।’

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, গবেষণা বলছে, উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা ও ওষুধে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও তা দক্ষভাবে ব্যবহার করা গেলে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিবর্তন জরুরি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। জুনে ওষুধটি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

আরও পড়ুন

×