নিয়োগপত্র পান না দেশের ৯২ শতাংশ চা শ্রমিক: বিটিএস

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নারী চা শ্রমিকদের অধিকার, সেবা প্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫ | ২০:০৬
বাংলাদেশে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৭৮ টাকা। এই ১৭৮ টাকা মজুরির শ্রমিকের ৯২ শতাংশের নিয়োগই আবার অনানুষ্ঠানিক। মাত্র ৭ দশমিক ৭ ভাগ শ্রমিক চাকরি শুরুর প্রাক্কালে নিয়োগপত্র পায়। এ রকম অনানুষ্ঠানিক নিয়োগের আওতাধীন শ্রমিকরা ভালো নেই। তারা প্রতিনিয়ত নিয়োগকারীদের কাছ থেকে উপেক্ষা, তাচ্ছিল্য, নিগ্রহ ও শোষণের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় চা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজের জায়গায় নিয়োগপত্র প্রদানসহ কয়েক দফা সুপারিশ জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নারী চা শ্রমিকদের অধিকার, সেবা প্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংস্থার নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল জিল্লুল মজিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি, শ্রম সংস্থার কমিশন প্রধান ও বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেমের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা প্রমুখ।
এছাড়াও, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সম্প্রতি একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। ওই গবেষণা ফলাফল এবং ‘আমরা পারবো’ নেটওয়ার্কের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত কর্মপন্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য এ সভার আয়োজন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, চা শ্রমিকদের মধ্যে হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বী বেশি। শ্রমিকদের মধ্যে যারা লেখাপড়া জানেন, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রতিটি পরিবারে ন্যুনতম সদস্য সংখ্যা গড়ে ৪ জন। বেশিরভাগ পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন দুইজন করে। ন্যুনতম দুইজন শিশু আছে পরিবারগুলোতে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও আছেন। দুই বছরের কম বয়সী সন্তান রয়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে। ওইসব পরিবারে দুগ্ধপোষ্য মা আছেন ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাকরির ধরনের ক্ষেত্রে চা বাগানে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী। আর বাকি ৪০ শতাংশ শ্রমিকই অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। কাজের জায়গায় নিয়োগপত্র পান মাত্র ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ‘পরিচয়পত্র’ হিসেবে নিয়োগ পায় ৫১ শতাংশ শ্রমিক। বাকিরা উপস্থিত ক্যাটাগরিতে মজুরি পান।
প্রতিবেদনে নিয়োগপত্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মালিকপক্ষের যে অবহেলা রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়। ওভারটাইমের ক্ষেত্রেও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা কম সুবিধা পান। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বিশ্রামের সুযোগ পান ৭৯ শতাংশ শ্রমিক। আর ২১ শতাংশ নারীই কোনো সুবিধা পান না। তবে ৯০ শতাংশ নারী শ্রমিক বেতনসহ চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পান।
আরও জানানো হয়, চা শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই স্বাস্থ্যসম্মত কোনো প্রক্ষালন ব্যবস্থা নেই, সন্তান দিবা পরিচর্যা কেন্দ্রের সুবিধা নেই। আর শারীরিক, মৌখিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া তো সেখানকার নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে একেবারেই নিয়মিত ঘটনা।
এ অবস্থায় প্রতিবেদনে কয়েক দফা সুপারিশ জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- প্রতিটি চা বাগানে শ্রমিকদের চাকরি শুরুর সময়েই নিয়োগপত্র দিতে হবে; শ্রমিক অধিকার রক্ষার্থে তাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে; শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার তৈরি করে দিতে হবে; দুগ্ধপোষ্য মায়েদের জন্য ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার’ তৈরি করে দিতে হবে; সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ সাপেক্ষে অন্তত ১২ মাসের মধ্যে চুক্তিপত্র দিতে হবে; প্রতিটা চা বাগানে ১৮ মাসের মধ্যে স্যানিটেশন সুবিধা এবং চাইল্ড কেয়ার সেন্টার করতে হবে; প্রতি তিন মাস পরপর ‘নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ’র ব্যবস্থা করতে হবে; মজুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করাসহ প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাজুয়িটি দিতে হবে; নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পৃথক শৌচাগার তৈরি করে দিতে হবে; জেন্ডার সংবেদনশীলতা, বাল্যবিবাহ, মানবাধিকার এবং শ্রমিক অধিকার নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার ১১টি উপজেলায় ‘স্ট্রেনদেনিং ইউমেন ভয়েসেস ইন টি গার্ডেন’ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাস্তবায়ন করে আসছে।
- বিষয় :
- চা শিল্প
- মজুরি বৈষম্য